মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ গুজরাটের বনাসকাঁটা জেলার পালনপুর তালুকের অন্তর্গত কুষ্কল গ্রাম। এই গ্রামটিতে বাস করেন ৭০০ মানুষ। এরা সবাই চৌধরী বংশের উত্তরসূরী। একই গ্রামে বাস করে ১৫০টি কুকুরও। গ্রামের মানুষের যেমন সম্পত্তি রয়েছে তেমনি সম্পত্তি রয়েছে ওই কুকুরগুলোরও। তাও অল্প স্বল্প নয় ৫ কোটি টাকার সম্পদের মালিক এই কুকুরগুলো।
অবিশ্বাস্য হলেও, প্রাণীকে সমান অধিকার দেওয়ার ভাবনা থেকে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন ওই গ্রামের মানুষ। তারা বলছেন, গ্রামবাসীর মতো কুকুরগুলোও ওই গ্রামের আলো বাতাসে বেড়ে উঠেছে। যুগ যুগ ধরে গ্রামের মানুষ যেমন গ্রামটিকে রক্ষা করেছে কুকুরগুলোর পূর্বসূরিরাও করেছে। মানুষের মতো গ্রামের প্রতি অধিকার রয়েছে ওদেরও। কিন্তু গ্রামবাসীর প্রত্যেকের থাকার জন্য ঘরবাড়ি রয়েছে, অথচ কুকুরদের থাকার জন্য আলাদা জায়গা নেই কেন? কেন তাদের মাসিক আয় থাকবে না? এই ভাবনা থেকে কয়েক বিঘা জমি কুকুরদের নামেই লিখে দিয়েছেন তারা।
কুকুরদেরও ভালভাবে জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে— এমনটাই মানেন ওই গ্রামের মানুষ। এমন একটা দিনও যায়নি, যে দিন গ্রামের কোনও কুকুর খালি পেটে ঘুমোতে গিয়েছে। কুকুরগুলিকে খাওয়ানোর জন্য গ্রামের একটি জায়গা আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ বাসনপত্রও।
শুধু সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবারই নয়, গ্রামের লোকেরা এই ১৫০টি কুকুরকে নিয়মিত লাড্ডুও খাওয়ান। তারা জানান, কুকুরদের এমনভাবে লালন-পালন করার রিতি তাঁদের গ্রামে বংশপরম্পরায় চলে আসছে।
জানা যায়, দেশটির স্বাধীনতার আগে কুষ্কল গ্রাম এক নবাবের শাসনে ছিল। গ্রামবাসীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেই নবাব কয়েক বিঘা জমি গ্রামবাসীদের চাষবাস করার জন্য দান করেন। গ্রামের লোকেরা এই জমিতে চাষ করলেও এর মধ্যে ২০ বিঘা জমি গ্রামের কুকুরদের নামেই লিখে দিয়েছেন তাঁরা। ওই জমিতে চাষ করে তাঁরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন, তার পুরোটাই কুকুরদের দেখাশোনার জন্য খরচ করেন তারা।
ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রকাশ চৌধরী জানান, গ্রামের লোকেরাই এই কুকুরদের জন্য চাষবাস করে আয় করেন। তাঁদের পূর্বপুরুষেরা এই প্রথা চালু করেছিলেন। জাতপাতের বিবেচনা না করে গ্রামের প্রত্যেকে এই প্রথা মানেন বলেও জানান প্রকাশ। এই ২০ বিঘা জমির বাজারমূল্য পাঁচ কোটি টাকা জেনেও কুকুরদের কথা ভেবে জমিতে হস্তক্ষেপ করেন না গ্রামের কেউই।
হিতেশ চৌধুরী নামে আরেকজন সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে জানান, কুকুরদের যেন স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয় তা নিয়ে গ্রামের প্রতিটা মানুষ সচেতন। ‘এই পৃথিবীকে আরও পশুবান্ধব করে গড়ে তুলতে সকলে আমাদের সহায়তা করছেন’, বলেন হিতেশ।
আপনার মতামত লিখুন........