সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০৯:১৪ অপরাহ্ন
মো. মনির হোসেন: দীর্ঘ পাচ মাস ধরে বন্ধ আছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে রেল চলাচল। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ রুটে রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ, কবে শুরু হবে তা-ও স্পষ্ট করে বলতে পারছে না স্থানীয় রেলওয়ে কর্মকর্তারা। তবে তারা জানান পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ কাজের জন্য এই সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়কের কাজ শেষ দিকে। আশা করছি, শিগগিরই নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ট্রেন সার্ভিস চালু হবে। তবে কবে নাগাদ ট্রেন চালু হবে, তা আমাদের জানায়নি কর্তৃপক্ষ। ট্রেন সার্ভিস বন্ধ থাকায় আমাদের কে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে পাঠানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে রেল সার্ভিস চালু হলে পুনরায় এখানে দায়িত্ব দেবে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষ রেলপথ এবং সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করেন। নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল এলাকা এবং ঢাকা লাগোয়া জেলা হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য মানুষ ঢাকায় গিয়ে এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে অফিস করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণেও যাতায়াত রয়েছে। ফলে রেলপথ এবং সড়কপথ দুটিতেই সাধারণ মানুষের চাপ থাকে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মানুষ ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে। মূলত কম ভাড়া ও সময় সাশ্রয়ের জন্য ট্রেনকে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন যাত্রীরা। ‘গত ডিসেম্বর থেকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই সময়ে রেল কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তিনমাসের মধ্যেই ট্রেন চালু করবেন। অথচ মে মাস চলছে। কিন্তু এখনো ট্রেন চালু হয়নি।’ ট্রেন বন্ধ থাকায় একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া অন্যদিকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হয়ে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। আর ট্রেন বন্ধ থাকায় বেজায় খুশি নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী গণপরিবগন মালিকরা। ট্রেনের পুরো যাত্রী তারা এখন বহন করছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ ও মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
ফতুল্লা এলাকার বাসিন্দা তোলারাম কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সজীব আহমেদ জানান, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ট্রেনের মাধ্যমে চলাচল করত। ফতুল্লা, গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে আমরা ট্রেনে খুব অল্প সময়ে ও কম ভাড়ায় আসতে পারতাম। তবে এখন সেই সুযোগ নেই। বাসে অথবা টেম্পোতে করে বেশি ভাড়া দিয়ে আমাদের আসতে হচ্ছে। তারপরেও আমরা সময়মতো কলেজে পৌঁছাতে পারি না।
ঢাকার বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান জানান, আগে ট্রেনে যাতায়াত করতাম। টাকা ও সময় দুটোই কম লাগতো। এখন সড়ক পথে চলাচলে প্রতিদিনই নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
জামিল হোসেন নামের আরেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রেন বন্ধের পুরো সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন গণপরিবহন মালিকরা। ট্রেন বন্ধ থাকায় তারা অনেক খুশি। ট্রেন চালু থাকলে তাদের যাত্রী কমে যায়। কারণ মানুষ কম ভাড়ায় ট্রেনে যাতায়াত করতে পারে। ট্রেন বন্ধের কারণে আমাদের ১৫ টাকার ট্রেনের ভাড়ার জায়গায় ৫৫ টাকা দিয়ে বাসে যেতে হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছেন পরিবহণ মালিকরা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ৯ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করতো। সবমিলিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৮টি ট্রেন যাত্রীদের নিয়ে আসা-যাওয়া করে আসছিল। কিন্তু পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজের স্বার্থে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সেতুর রেল সংযোগ সড়কের কাজ শেষ দিকে রয়েছে। তবে কবে নাগাদ নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে রেল সার্ভিস চালু করা হবে, তা বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন........