Warning: Creating default object from empty value in /home/alokitonarayanga/public_html/wp-content/themes/newsfresh/lib/ReduxCore/inc/class.redux_filesystem.php on line 29
দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে তাঁতি পাখি বাবুই দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে তাঁতি পাখি বাবুই – Alokito Narayanganj 24

বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে তাঁতি পাখি বাবুই

Babui birds nest

মো. মনির হোসেন: বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই! আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে-কবি রজনীকান্তের কালজয়ী কবিতা স্বাধীনতার সুখ। আজও কবিতাটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করলেও হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি। শহুরে বাচ্চাদের কাছে এই কবিতা শুধুই পাঠ্যবইয়ের আর দশটা কবিতা ছড়ার মতনই।

তবে বাসা তৈরিতে নিপুণ বলে বাবুই পাখিকে অনেকে তাঁতি পাখি বা বুননী পাখিও বলে। একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। রহস্যে ঘেরা এই বাবুই পাখির বাসা, দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে ক্রমশ।

কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেই দৃষ্টি ভোলানো পাখিটিকেও তার নিজের তৈরি বাসা—যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলত, তা আজ আমরা হারাতে বসেছি।

কিন্তু বাবুই কেন এই অদ্ভুত প্রজাতির বাসা বানায়? এর পেছনে কি কোনো উদ্দেশ্য বা কারণ আছে? হ্যাঁ তার এই বাড়ি বানানোর পেছনে রয়েছে বিচিত্র সব তথ্য।

বাবুই পাখির বাসা ও জীবনযাপন নিয়ে ভারতের একজন খ্যাতিমান পাখি বিশারদ এক অদ্ভুত তথ্য দিয়েছেন। খুব কাছে থেকে তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ১৯৩০ সালে এ রহস্যের কথা জানতে পারেন।

বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড়ুই পাখির মতো। পুরুষ বাবুই দেখতে খুব সুন্দর, এর গায়ের রঙ উজ্জ্বল সোনালী হলুদ। একটা পুরুষ বাবুই দু’য়ের অধিক যে কোনো সংখ্যক নারী বাবুই স্ত্রী হিসেবে রাখতে পারে।

তবে কোনো স্ত্রীর মনে আঘাত দিয়ে সে একাধিক স্ত্রী পোষার ঝামেলায় যায় না। স্ত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার ব্যাপারটি সে খুব সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে ঘটায়। সে কয়টা স্ত্রী দেখা-শোনা করতে পারবে, তা নির্ভর করে তার বাসা তৈরির কারিগরি দক্ষতা ও ক্ষমতার উপর।

বাসা তৈরির সব ঝামেলা পোহাতে হয় একা পুরুষ বাবুইকে। বাসা তৈরিতে স্ত্রী বাবুই মোটেও সাহায্য করে না।

পুরুষ বাবুই বাসা অর্ধেক তৈরি করে ফেললেও, নারী বাবুই দল বেঁধে উড়ে আসে বাসা দেখার জন্য। পুরুষ বাবুই বাসা তৈরিতে কি পরিমাণ দক্ষতা ও বুদ্ধি ঢেলেছে নারী বাবুই তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। বাসা পছন্দ হলে দখল করে নেয় বাসা এবং বাসা নির্মাতাকে।

আর দেরী না-করে পুরুষ বাবুই ঐ অর্ধ-সমাপ্ত বাসাতেই নারী বাবুইয়ের সঙ্গে সংসার পাতে এবং সুখি দাম্পত্য জীবন শুরু করে।

অপর এক তথ্যে জানা যায়, বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য নানা ভাবে ভাব-ভালোবাসা নিবেদন করে এরা।

বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্ক্ষিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে চার দিন। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপুণভাবে বিরামহীনভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে।

প্রেমিক বাবুই যত প্রেমই দেখাক না কেন, প্রেমিকা ডিম দেওয়ার সাথে সাথেই প্রেমিক বাবুই আবার খুঁজতে থাকে অন্য সঙ্গী। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে মোট ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে।

ক্ষেতের ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর পরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে।

বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে—প্রকৃতির এক অপরূপে সৃষ্টি এই বাবুই পাখি। প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর নামে সমধিক পরিচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ শিল্পসম্মত বাসা এখন বলতে গেলে আর চোখে পড়ে না।

পরিচিতিঃ
বাবুই Ploceidae গোত্রের অন্তর্গত একদল প্যাসারাইন পাখি। খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা “তাঁতি পাখি” (Weaver Bird) নামেও পরিচিত। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। কয়েক প্রজাতির বাবুই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে। তুতির সাথে এরা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এরা মূলত বীজভোজী পাখি, সে জন্য তাদের ঠোঁটের আকৃতি বীজ ভক্ষণের উপযোগী; চোঙাকার আর গোড়ায় মোটা। অধিকাংশ বাবুই প্রজাতির আবাস সাব-সাহারান আফ্রিকায়, তবে কয়েকটি প্রজাতি এশিয়ায় স্থায়ী। অল্প কয়েকটি প্রজাতিকে বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। তবে খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা “তাঁতি পাখি” (Weaver Bird) নামেও পরিচিত, এরা বেশ দলবদ্ধ প্রাণী আর কলোনি করে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত।
বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই দেখা যায়:

দেশি বাবুই (Ploceus philippinus),দাগি বাবুই (Ploceus manyar) ও বাংলা বাবুই (Ploceus benghalensis)

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........


© All rights reserved © 2018 Alokitonarayanganj24.net
Design & Developed by SHAMIR IT
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!