Warning: Creating default object from empty value in /home/alokitonarayanga/public_html/wp-content/themes/newsfresh/lib/ReduxCore/inc/class.redux_filesystem.php on line 29
নায়ক রাজের চলে যাওয়ার ছয় বছর নায়ক রাজের চলে যাওয়ার ছয় বছর – Alokito Narayanganj 24

রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন

নায়ক রাজের চলে যাওয়ার ছয় বছর

মো. মনির হোসেন:বাংলা সিনেমার প্রাণপুরুষ নায়ক রাজ রাজ্জাক সব বাঁধন ছেড়ে ছয় বছর আগে ২০১৭ সালে ২১ আগস্ট না ফেরার দেশে, বসত গড়েছেন সিনেমা ভুবনের মহানায়ক। ২১ আগস্ট তার মৃত্যু বার্ষিকী।
তাঁর পুরো নাম ছিল আব্দুর রাজ্জাক। চলচ্ছিত্রে তিনি শুধু রাজ্জাক বলেই আবির্ভূত হন। চলচ্চিত্রের পথচলায় একের পর এক সাফল্যকে মুঠোবন্দি করতে করতে একসময় তিনি হয়ে ওঠেন অনন্য এক মানুষ। তার অভিনয়ের ঔজ্জ্বল্যে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি। অভাবনীয় সাফল্যের গুণে তিনি ভূষিত হন ‘নায়করাজ’ উপাধিতে। আর এ উপাধি তাকে দিয়েছিলেন প্রয়াত খ্যাতিমান সাংবাদিক চিত্রালি সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী।
কলকাতার নাকতলা এলাকার জমিদার বংশের সন্তান রাজ্জাক। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। সচ্ছল-সুখী পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। খামখেয়ালিতে পড়াশোনায় মন বসেনি। স্কুলজীবনে শুরু মঞ্চে অভিনয়। পাড়ি জমান তৎকালীন বম্বেতেও। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি।
১৯৬২ সালের কোনো একদিন কলকাতার বাঁশদ্রোণী এলাকায় দেখা খায়রুন্নেসার সঙ্গে, যিনি রাজ্জাকের জীবনে ‘লক্ষ্মী’ হয়ে এসেছিলেন। একদিন তাঁকে করলেন বিয়ে, তখন সবে ২০-এর যুবক রাজ্জাক। বছর পার না হতেই জন্ম হয় পুত্রসন্তানের। এর এক বছর পর কলকাতায় বাধে দাঙ্গা। সে ঘটনা কালো অধ্যায় হলেও রাজ্জাকের জীবনে এই দাঙ্গাই যেন নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছিল।
দাঙ্গার কারণে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ত্রিপুরা থেকে দলে দলে মুসলমানেরা পাড়ি দেয় তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে। রাজ্জাকও স্ত্রী লক্ষ্মী এবং শিশুপুত্র বাপ্পাকে নিয়ে দাঙ্গার সময়ে ঢাকায় আসেন। ১৯৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল রাজ্জাক ঢাকায় পৌঁছান। স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে ওঠেন ৮০ টাকা মাসিক ভাড়ায় কমলাপুরের একটি বাসায়।
রাজ্জাকের জীবনটাই ছিল সিনেমার গল্পের মতো। তিনিও বলতেন, ‘আমার জীবনটাই একটা সিনেমা…।’ নানা সময়ের সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, একটা সময় ফার্মগেট এলাকায় থিতু হয়েছিলেন দুই বাচ্চা আর স্ত্রী লক্ষ্মীকে নিয়ে। তখন জীবিকা নির্বাহের জন্য টিভি নাটকে অভিনয় করতেন। অভিনয় করে সপ্তাহে পেতেন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মাসের খরচ ৬০০ টাকা। রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘অল্প আয়ে সংসারের খরচ চলে না। বাচ্চাদের দুধ জোগাড় করতেই সব টাকা ব্যয় হয়ে যেত। ওই সময় স্বামী-স্ত্রী দুজন মাঝেমধ্যে উপোসও করতাম। পয়সার অভাবে ফার্মগেট থেকে ডিআইটি টিভি কেন্দ্রে হেঁটে যাতায়াত করতাম।’


একদিন চলচ্চিত্রের পর্দার সামনে থাকার একটা সুযোগ এল রাজ্জাকের। ১৯৬৫ সালে, ‘আখেরি স্টেশন’ ছবিতে সহকারী স্টেশনমাস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ঢাকার ছবিতে ওটিই রাজ্জাকের প্রথম অভিনয়। এরপর আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন। যেমন ‘কার বউ’ ছবিতে অটোরিকশাচালক (বেবিট্যাক্সি ড্রাইভার), ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’-এ পাড়ার ছেলে মিন্টু, ‘ডাকবাবু’তে আদালতের কর্মচারী, ‘কাগজের নৌকা’য় বাইজিবাড়ির মাতাল। একসময় পরিচয় হয় জহির রায়হানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে ‘বেহুলা’ ছবিতে নেন। ওই ছবি সাইনিং মানি হিসেবে ৫০০ টাকা নগদ পেয়েছিলেন। সেই টাকার কিছু অংশ সংসারের কাজে খরচ হয়। বাকি টাকা বন্ধুবান্ধবকে মিষ্টি খাইয়ে শেষ করেন রাজ্জাক।
‘বেহুলা’ মুক্তির পর দারুণ ব্যবসা করে। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের দর্শক গ্রহণ করে নেয় রাজ্জাককে। ‘বেহুলা’ মুক্তির পর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজ্জাক। এক্সট্রার ভূমিকায়, আউট অব ফোকাসে অখ্যাত-অগুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করেও একসময় যে হিরো হয়ে ওঠা যায়, রাজ্জাক প্রমাণ করে দেন।

১৯৬৯ সালে কাজী জহিরের ‘মধু মিলন’ ছবি দিয়ে রাজ্জাক-শাবানা জুটির শুরু। ১৯৭২ সালে নির্মিত এ জুটির ‘অবুঝ মন’ ছবিটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পায়। ‘অবুঝ মন’, ‘সাধু শয়তান’, ‘মাটির ঘর’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’, ‘সখী তুমি কার’, ‘অমর প্রেম’, ‘রজনীগন্ধা’ এ জুটির উল্লেখযোগ্য ছবি
বেঁচে থাকতে ২০১৬ সালে একবার রাজ্জাক তাঁর জীবনের গল্পটা শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সবার ভালোবাসা পেয়ে আজ আমি পরিপূর্ণ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক সময় অর্ধাহারে দিন কেটেছে আমার। সপ্তাহে ৬৫ টাকা পেতাম টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান করে, সেই ৬৫ টাকা দিয়ে আমার সংসার চলেছে। একটা সময় পর আমি “বেহুলা”র নায়ক হলাম। ৫০০ টাকা সাইনিং মানি নিয়ে খুশিতে বাড়ি এলাম। তারপরের কাহিনিটা অনেকেই জানেন।’

সেদিন কথা বলার এক ফাঁকে কেঁদেছিলেন রাজ্জাক। অশ্রুসিক্ত রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘আজ আমি এই যে নায়করাজ, এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব হয়নি।…আমার যাঁরা শ্রদ্ধেয় পরিচালক ছিলেন, তাঁরা আমাকে এবং তিনজন নায়িকা নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সেই যুদ্ধে আমি একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করেছি তাঁদের সঙ্গে। শুধু রোববার দিন বাড়ি যেতাম আমি, অন্য দিনগুলোয় মেকআপ রুমের ফ্লোরে শুয়ে থাকতাম।’ তাঁর সঙ্গে সেদিন মিলনায়তনের উপস্থিত অনেকেই কেঁদেছিলেন।

রাজ্জাকের অভিনয়জীবনের শুরুটা হয়েছিল একেবারেই ছোট চরিত্র দিয়ে, সিনেমায় যাকে বলে ‘এক্সট্রা’। কলেজে পড়ার সময় চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। অজিত ব্যানার্জির ১৯৫৮ সালের ছবি ‘রতন লাল বাঙালি’। ওই ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আশিস কুমার ও নায়িকা সন্ধ্যা রায়। ছোট্ট একটি চরিত্র ছিল রাজ্জাকের—পকেটমার। তৃতীয় ছবি ‘শিলালিপি’। এখানেও তাঁর চরিত্রটি ছিল সে অর্থে নগণ্য। একটি গানের দৃশ্যে অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবশ্য সেবার সম্মানী পেয়েছিলেন ২০ টাকা। তৃতীয় ছবি ‘শিলালিপি’র ২০ টাকার সম্মানী রাজ্জাকের আস্থা আর উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য তিনি বুঝেছিলেন, টালিগঞ্জে (পশ্চিম বাংলার চলচ্চিত্রশিল্পের মূল কেন্দ্র) সুবিধা করতে পারবেন না। ‘এক্সট্রা’ হয়েই থাকতে হবে। নিলেন নতুন চ্যালেঞ্জ। চলে গেলেন মুম্বাই (তখনকার বোম্বে)।

১৯৫৯ সালে কলকাতার রাজ্জাক অভিনয় শিখতে মুম্বাই যান। নায়ক হতে গিয়ে ভর্তি হন অভিনয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফিল্মালয়ে। তখন ওখানে ক্লাস নিতেন দিলীপ কুমার, শশধর মুখার্জিরা। শুধু চঞ্চলতা আর অস্থিরতার কারণে এক বছরের সেই কোর্সের তাত্ত্বিক, পদ্ধতিগত শিক্ষায় রাজ্জাকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। মুম্বাইয়ের চিত্রজগতে ঢোকার সুযোগ খুঁজতে থাকেন, কিন্তু বিষয়টি শুধু কঠিন নয়, অসম্ভবই ছিল।
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া তেমন একটা করেননি রাজ্জাক। ব্যবসা, চাকরি—কোথাও থিতু হননি। কারণ একটাই—নায়ক হতে চেয়েছিলেন রাজ্জাক। ঢাকায় এসে সেই ল্যাম্পপোস্টের পাশে আশ্রয় নেওয়া রাজ্জাক একসময় উত্তরায় বাণিজ্যিক ভবন, গুলশানে বাড়ি করেছেন। এ অর্জন সহজে ধরা দেয়নি। নিজের মেধা, প্রতিভার সবটুকু ঢেলে দিয়ে পরিশ্রম করে তিলে তিলে তৈরি করেছেন। এক্সট্রা থেকে হয়েছেন নায়ক, ঢাকাই চলচ্চিত্রশিল্পের রাজা। হয়েছিলেন নায়করাজ। শুধু অভিনয়ের জন্য জীবনে যত ঝড়ঝাপটা আসুক, নিজের স্বপ্নটাকে হারিয়ে যেতে দেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........



Deprecated: WP_Query was called with an argument that is deprecated since version 3.1.0! caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/alokitonarayanga/public_html/wp-includes/functions.php on line 5609

Deprecated: WP_Query was called with an argument that is deprecated since version 3.1.0! caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/alokitonarayanga/public_html/wp-includes/functions.php on line 5609

© All rights reserved © 2018 Alokitonarayanganj24.net
Design & Developed by SHAMIR IT
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!