শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

ফতুল্লার অলি-গলি সেজেছে বিশ্বকাপের রঙে

নজরুল ইসলাম সুজনঃ খেলা হচ্ছে সুদূর কাতার, কিন্তু তার উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে ফতুল্লার অলিতে-গলিতে। ফিফা বিশ্বকাপ আসর ২০২২’র শুরু থেকেই ফতুল্লায় পরিণত হয়েছে পতাকায় । পছন্দের দল বলে কথা, সাপোর্ট করার ক্ষেত্রে একটু পাগলামি না থাকলে কি চলে! চার বছর পর পর বিশ্বকাপ আসে; আর তখনই গোটা ফতুল্লায় মেতে উঠে ফুটবল উত্তেজনায়।
দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয় পছন্দের দলগুলোর দেয়ালচিত্র, টাঙানো হয় রঙ বেরংয়ের ব্যানার। নিজ নিজ প্রিয় দলের পতাকা টাঙিয়ে এলাকায় এক রকম উৎসবের আমেজ তৈরি করে এখানকার তরুণ প্রজন্ম। ব্যাতিক্রম নয় এবারের বিশ্বকাপ আসরও। ফিফা বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দফায় দফায় মিটিং করে সমর্থকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দর্জিকে দিয়ে পছন্দের দলের পতাকা সেলাই করা হয়। আসর শুরুর আগেই সমর্থকরা নিজ নিজ বাড়ি ও  বাড়ির ছাদে সেসব পতাকা টাঙিয়ে ফেলেন। কার পতাকা কার থেকে বড় হবে তা নিয়ে চলে নীরব প্রতিযোগিতাও!
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছাদে ছাদে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেনসহ পছন্দের বিভিন্ন দলের পতাকা উড়ছে। দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয়েছে দেয়ালচিত্র, যাতে শোভা পাচ্ছে ম্যাসি-নেইমারদের মুখাবয়ব। শুধু তাই নয় সমর্থকরা নিজ বাড়ির গেট আর দেয়ালেও চিত্রশিল্পী দিয়ে আঁকিয়েছেন পছন্দের দেশের পতাকা। একই দলের অনেক সমর্থক একত্রিত হয়ে চাঁদা তুলে সেই টাকা দিয়ে প্রজেক্টর ও সাউন্ডসিস্টেম বুক করে খেলা দেখছে। পছন্দের দলের খেলার দিন নিজ বাড়ির সামনে রাস্তায় প্রজেক্টর লাগিয়ে চেয়ার পেতে বসে খেলা উপভোগ করছেন তারা। জমজমাট সেই আসরে থাকছে বাহারি খানাখাদ্যের আয়োজনও।

২০১০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার লালপুরে নিজেদের দোতলা বাড়িটি ব্রাজিলের পতাকার আদলে রঙ করেন বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীন টুটুল। ২০১৪ সালে বাড়িটির ভাঙার কাজ চলায় সেবারের বিশ্বকাপে বাড়ির রঙ পরিবর্তন করা যায়নি। তবে ২০১৮ সালে নতুন ছয়তলা ভবনের পুরোটা জুড়েই সাজিয়েছেন ব্রাজিলের পতাকায়। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সময় ব্রাজিলের ফুটবল দলের  এই ভক্তের সঙ্গে দেখা করার জন্য টুটুলকে বাংলাদেশস্থ ব্রাজিল দূতাবাসে আমন্ত্রণ জানান সহকারী রাষ্ট্রদূত। পরে ব্রাজিল দূতাবাস থেকে টুটুলকে জানানো হয় ব্রাজিল বাড়ি পরিদর্শনের কথা। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ফতুল্লায় ব্রাজিল বাড়িতে আসেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত। সেই সময় ব্রাজিল সমর্থকরা রাষ্ট্রদূতকে কাছে পেয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এখনো এই বাড়িটি ‘ব্রাজিল বাড়ি’ হিসেবে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার একটি দেয়ালে পছন্দের দল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানির পতাকা আঁকিয়েছেন সেখানকার তরুণ সমর্থকরা। আলাদা তিনটি দেশের সমর্থক হলেও এক শিল্পী দিয়েই আঁকানো হয়েছে তিনটি পতাকা। এখানকার তিন দলের এই তরুণ সাপোর্টাররা বড় ছোট বিভিন্ন বয়সের। আলাদা আলাদা দলের সাপোর্টার হলেও তারা সবাই প্রজেক্টরের মাধ্যমে একসাথে বসেই বিশ্বকাপ আসর উপভোগ করেন। কোন দল হেরে গেলে সেই দলের সাপোর্টারদের ক্ষেপানো, জিতলে জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়া, তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া বিবাদ, হাসি-ঠাট্টা আর আনন্দ উন্মাদনার মাধ্যমেই তারা গোটা বিশ্বকাপ আসর উপভোগ করছেন।
স্থানীয় তরুণ রুবেল বলেন, আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার কিন্তু অন্যরা যে যেই দলের সাপোর্টারই হোক না কেন, ভাই-বন্ধু-বান্ধব, বড়-ছোট সবাই মিলেই আমরা খেলা দেখি। খেলায় জয়-পরাজয় আছেই। কিন্তু চার বছর পর পর আমরা যে সবাই একসাথে আনন্দ উল্লাস করছি সেটাই অনেক ভাল লাগে।
নাদিম মিয়া নামে স্থানীয় আরেক তরুণ  বলেন, আমি জার্মানির ফুটবলের ভক্ত৷ কারণ জার্মান দল ব্যালেন্সড, দু’একজনের ওপর নির্ভরশীল নয়৷ আমার মত এই এলাকায় আরো অনেক টোটাল ফুটবলের সমর্থক আছেন। তাছাড়া আমার অনেক বন্ধু ভাই আছে যারা ব্রাজিল আর্জেন্টিনার সমর্থন করেন। কিন্তু যেই দলের সাপোর্টারই হোক না কেন প্রত্যেকটা ম্যাচ আমরা এক সাথেই উপভোগ করি।
মাসদাইর রোডের একটি দেয়ালচিত্র এঁকেছেন শুভ আহম্মেদ। তিনি বাংলাদেশের আলোকে বলেন, আমি নিজে ব্রাজিলের সমর্থক। তবে এলাকায় বন্ধুমহল, বড় ভাইরা বিভিন্ন দলের সাপোর্ট করে। সবাই একত্রিত হয়েই খেলা দেখি। তাদের রিকুয়েস্টে যার যার পছন্দের দলের পতাকার দেয়ালচিত্র এঁকেছি। বিশ্বকাপ উন্মাদনা মানেই ফতুল্লা, আর এই উন্মাদনার মধ্য দিয়ে ফুটবলের প্রতি আমাদের ভালবাসা প্রকাশ পায়।
পাগলা কুতুবপুর এই উন্মাদনার বাইরে নয়। বিজয় দিবসে যেমন অলিতে-গলিতে ছোট ছোট কাগজের বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে আকাশ ঢেকে ফেলা হয়, তেমনি বিশ্বকাপ আসর উপলক্ষে এই এলাকায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের ছোট ছোট পতাকা লাগিয়ে এলাকা ঢেকে ফেলা হয়েছে।
কাশিপুর রাস্তার একপাশ থেকে অপরপাশ পর্যন্ত ব্রাজিলের কাপড়ের একটি পতাকা লাগানো হয়েছে। লম্বায় বিশাল আকৃতির এই পতাকার কারণে পুরো রাস্তায় ছায়া পড়ে গেছে, আকাশে রোদ থাকলেও পতাকার কারণে তা দেখা যায় না। এছাড়া একই এলাকার একটি কারখানার সামনের দেয়ালের একপাশে হুবহু বিশ্বকাপের প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে। অপরপাশে আঁকা হয়েছে আর্জেন্টিনার পতাকা ও ফুটবলসহ লিওনেল ম্যাসির ছবি।
নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........


© All rights reserved © 2018 Alokitonarayanganj24.net
Design & Developed by SHAMIR IT
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!