Warning: Creating default object from empty value in /home/alokitonarayanga/public_html/wp-content/themes/newsfresh/lib/ReduxCore/inc/class.redux_filesystem.php on line 29
বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব তালগাছ : হারিয়ে যাচ্ছে ‘বাংলা বাবুই’ বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব তালগাছ : হারিয়ে যাচ্ছে ‘বাংলা বাবুই’ – Alokito Narayanganj 24

রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব তালগাছ : হারিয়ে যাচ্ছে ‘বাংলা বাবুই’

বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব তালগাছ : হারিয়ে যাচ্ছে ‘বাংলা বাবুই’

রণজিৎ মোদক : তালগাছ দেখলেই মনে হয় আহসান হাবীবের কবিতার রাজ্যে আমি হারিয়ে যাই। ছেলেবেলায় শতবার পড়া এ কবিতাটি বারবার আমাকে নিয়ে যায় পাহাড় ঘেষা বহতা নদীর তীরে সবুজ ঘেরা গাঁয়ে।

“আমি মেঘনা পাড়ের ছেলে
আমি মেঘনা নদীর নেয়ে।
মেঘনা নদীর ঢেউয়ের বুকে
তালের নৌকা বেয়ে
আমি বেড়াই হেসে খেলে-
আমি মেঘনা পাড়ের ছেলে।”

তাল বাংলাদেশ ও এশিয়া মহাদেশের অনেক অঞ্চলেরই জনপ্রিয় গাছ কারণ এর প্রায় সব অঙ্গ থেকেই কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরী হয়, প্রায় কিছুই ফেলা যায় না। তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, তালপাতার চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখবার পুঁথি, কুন্ডলী, পুতুল ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী তৈরী হয়। তালের কান্ড দিয়েও বাড়ি, নৌকা, হাউস বোট ইত্যাদি তৈরী হয়।

তালের ফল এবং বীজ দুই-ই বাঙালি খাদ্য। তালের ফলের ঘন নির্যাস থেকে তাল ফুলুরি তৈরী হয়। তালের বীজও খাওয়া হয় লেপা বা “তালশাঁস” নামে । তাল গাছের কান্ড থেকে ও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি (একপ্রকার চোলাই মদ) ইত্যাদি তৈরি হয়। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রণ ও ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক খনিজ উপাদান। এর সাথে আরো আছে অ্যান্টি অক্সিজেন ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। তবে তাল কেনার সময় নরম তাল কেনা উচিৎ। কারণ বেশি পাকা তাল হজম করতে সমস্যা হয়।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ বান্ধব তালগাছ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, “তালগাছ, এক পায়ে দাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উকি মারে আকাশে।” রবীন্দ্রনাথ তাল গাছকে একাকী এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ধ্যানী বলে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাল গাছকে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে, ক্লাসে পড়া না পারা ছাত্রের সাথে তুলনা করেছেন। আমাদের দেশের পরিবেশ বান্ধব এই তাল গাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। এক সময় সারা বাংলার গ্রাম গঞ্জে, প্রায় প্রতিটি ভিটা বাড়ী থেকে শুরু করে আনাচে কানাচে, রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়ানো তাল গাছের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পরতো। কালের পরিক্রমায় বাঙলার ঐতিহ্যের অংশ তাল গাছের অস্তিত্ব আজ সংকটাপূর্ন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাল গাছ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাওয়ার কারণে এ প্রজন্মের লোকেরা অনেকটা তাল গাছের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা ও তাল ফলের স্বাদ ভুলতে বসেছে।

কয়েক বছর আগেও বাজারে প্রচুর তাল বিক্রি হতো। জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাসে কাচা তাল ফলের শাস খেতে চারিদিকে ডাক পরে যেত। চলতো শাঁস খাওয়ার প্রতিযোগীতা। কে কত খেতে পারে। শ্রাবণ ভাদ্র মাসে পাকা তালের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রতিটি পাড়া মহল্লা। পাকা তালের আটি পিষে হলুদ রস বের করার জন্য শুষে যেত বাড়ীর ঝি-বউয়েরা। শ্রাবণ মাসে কলাপাতায় তালের পিঠা তৈরীতে ধুম পরে যেত। শুধু তালের পিঠাই নয়, তালের রুটি, তালের বড়াও তালসত্ব সহ আরো বাহারী অনেক রকম পিঠা। মেহমানদারীতে সকল পিঠা ছিল স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।

প্রকৃতির কি বিধান একটি তালগাছ থেকে দৈনিক তিনবার সকাল, দুপুর, বিকাল রস পাওয়া যায়। তালের কাচা সর সেবনে মনে প্রশান্তি আনে। প্রতি বৎসর তাল গাছে ফল আসার সাথে সাথে রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গাছে উঠা নামার জন্য গাছের সাথে খাড়া করে বাঁশ বেধে নেওয়া হয়। গাছিরা দৈনিক অন্তত তিনবার প্রতিটি তালের ছড়ার অগ্রভাগ একটু একটু করে কেটে অতিযত্নে রস সংগ্রহ করে থাকে। তালের রস থেকে তৈরী হয় তালের পাটালি গুড়। তালের গুড় খুব সুস্বাদু। এছাড়া তাল মিছরি কফ ও কাশির মহা ঔষধ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

তাল গাছের সব অংশই প্রয়োজনীয়। তাল গাছের পাতার সাহায্যে নানা রকম হাত পাখা তৈরী হয়। শিশু-কিশোরকালের কথা, আমাদের গ্রামে তখন বিদ্যুৎ ছিল না। চৈত্রের তাপদাহে ঘুম আসতোনা, মা সারারাত তাল গাছের হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতো। মায়ের সাথে এই হাত পাখার যেন একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল, রাত হলেই মায়ের হাতের পাখার বাতাস ছিলো এক প্রশান্তি। সারাদিন যে যেখানেই কাটাতাম রাতে মায়ের কাছেই ঘুমিয়ে থাকতাম। তার কারণ মায়ের সাথে এই পাখার বাতাসের দারুণ একটা সম্পর্ক ছিল। যাহা গ্রীষ্মকালে গরমের উত্তাপে এনে দেয় প্রশান্তির হিমেল হাওয়া। মায়ের হাতের সেই স্নেহমাখা হাতপাখার বাতাস হৃদয়কে স্পর্শ করতো। এখন গ্রামে বিদ্যুৎ আছে, বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে গাঁ শীতল হয়, কিন্তু হৃদয়কে স্পর্শ করে না। এই তাল পাখার সাথে রয়েছে অনেকের অতীত জড়িত।

এছাড়া তাল পাতা দিয়ে টুপি তৈরী হয়। কুটির শিল্প কাজে ও তাল পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। তাল পাতা চাটাই ও মাদুর তৈরীতে ভূমিকা রাখে। তাল পাতার উপরে হাতে খড়ি দেওয়ার বিষয়টি খুবই উল্লেখযোগ্য। তাল পাতা ঘরের চাল তৈরী ও বেড়া নির্মাণে ব্যবহার হয়। তাল গাছের পাতার সাথে সুপরিচিত বাবুই পাখির সুনিপুন ভাবে তৈরী পাতার সাথে ঝুলানো বাসা (আশ্রয়স্থল) সকলের পরিচিত। আজকাল হাজার হাজার পাখীর কিচির মিচির ডাক আর মনোরম দৃশ্য চোখে পরে না। তাল গাছের কাঠ খুব শক্ত বিধায় ঘরের কাজও নৌকা তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

তাল গাছ এক বীজ পত্রী উদ্ভিদ। শাখা প্রশাখাবিহীন এক পায়ে দাড়িয়ে থাকা অন্যতম দীর্ঘ এই গাছের মাধ্যমে পাড়া, মহল্লা ও বাড়ীর পরিচয় পাওয়া যেত। তাল গাছ ৬০/৭০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর জীবন কাল প্রায় ১০০/১৫০ বছর। গ্রাম বাংলার মাটি তাল গাছের উপযোগী। অন্যান্য গাছের মত তাল গাছের পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তবে তালের বীজ রোপন করার পর হেফাজত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাধারণত বাড়ীর আইল, অনাবদী জমি, খাল নদীর পাড়, ও রাস্তার দু’পাশে লাগনো যায়। সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো উচিত। তাল গাছ মাটির ক্ষয়রোধ ও নদী ভাঙ্গণ প্রতিরোধ করে। তাল গাছের শিকড় মাটি কামড়ে ধরে থাকে। ফলে ঝড় বন্যায় গাছ উপড়ে ফেলতে পারে না।

গ্রাম-গঞ্জে এমনও একটি প্রচলিত কাব্য আছে শালিস মানি কিন্তু বড় তাল গাছটা আমার। একথার মাধ্যমে তাল গাছের গুরুত্বকেই বুঝানো হয়েছে। জনশ্রুতি আছে যে, তাল গাছের মত বড় বড় গাছে বর্জ্রপাত হতো। ফলে মাঠ-ঘাটে প্রানিকুলের জীবন রক্ষা পেতো। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি হয়ে উঠছে বিরাগভাজন। সময় মত বৃষ্টি না হওয়া, আবার অতিবৃষ্টি, কালো মেঘের বর্জ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। বর্জ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা এত বেশী যাহা ভাবিয়ে তুলছে। এ অবস্থায় তাল গাছ রোপন, হেফাজত ও রক্ষায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের পদক্ষেপ প্রয়োজন।

লেখক : রণজিৎ মোদক
শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........



Deprecated: WP_Query was called with an argument that is deprecated since version 3.1.0! caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/alokitonarayanga/public_html/wp-includes/functions.php on line 5609

© All rights reserved © 2018 Alokitonarayanganj24.net
Design & Developed by SHAMIR IT
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!