নিজস্ব প্রতিবেদক :সহসাই হচ্ছেনা নারায়নগঞ্জ জেলার সাতটি থানা ও পৌর বিএনপির কমিটি। নগদ অর্থ নিয়ে কমিটি বানিজ্যের মাধ্যমে বিতর্কিত,অযোগ্যদের নাম প্রস্তাব করে যে কমিটি গঠন করতে চেয়েছিলো জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ তা অনেকটাই বুমেরাংয়ের পথে। তথ্য মতে, শুরুর দিকে তিনি রাজধানী সিদ্ধিশ্বরীতে সোনারগাঁও বিএনপি নেতা মোশারফের বাস ভবনে বসে কমিটি বানিজ্য সহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের সক্রিয় ছিলো।তবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তা নেতা- কর্মীদের কল্যানেই প্রকাশ হয়ে পরে। উপহার স্বরুপ ফতুল্লা থানা বিএনপির সদস্য সচিব পান্না মোল্লার দেওয়া পল্টনস্থ অফিসে বসেই বর্তমানে কমিটি বানিজ্য সহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে মামুন মাহমুদ।
সূত্র জানায়, রাজনীতির মাঠে না থাকায় আগামীতে দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজী মনিরুজ্জামান ও বিএনপি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা শাহ্ আলমের জন্য কষ্টকর হবে। এ জন্যই কমিটিতে তাদের অনুগত নেতাদের রাখতে জোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর সেদিক বিবেচনা করেই তাঁরা দুজন মামুন মাহমুদের মাধ্যমে রূপগঞ্জ, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ কমিটিতে বিতর্কীত এবং আওয়ামীলীগ ঘেষা নিজস্ব লোকদের দিয়ে কমিটি বাগিয়ে নিতে চাচ্ছেন। অপরদিকে সোনারগাঁওয়ের বিতর্কিত বিএনপি নেতা যিনি মনোরোঞ্জন মোশারফ নামে পরিচিত সেই মোশারফ কে সাথে নিয়ে এবং তাকে কমিটিতে স্থান পাইয়ে দিতে মরিয়া মামুন মাহমুদ। আর এই চার থানা কমিটির কারনে আটকে আছে কমিটি।
দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, জেলার ফতুল্লা,সিদ্ধিরগঞ্জ,সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ থানা কমিটি গঠনে মামুন মাহমুদ নগদ অর্থ নিয়ে এবং বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী বিতর্কীত ব্যবসায়ী শাহ আলম ও বিএনপির ব্যর্থ নেতা বলে পরিচিত কাজী মনিরুজ্জামানের প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী বিতর্কীতদের কমিটিতে জায়গা করে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা বিএনপির রাজনীতিকে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে মামুন মাহমুদকে দিয়ে নিজেদের ঘনিষ্ঠজনদের কমিটিতে স্থান করে দিতে চাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ফতুল্লা থানা কমিটিতে যাকে আহবায়ক করতে চাচ্ছেন সেই রোজেল নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে ওয়ানম্যান শো নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল্লা বাদলের জমি ব্যবসার অংশিদার এবং তারা আেন মামাতো ফুফাতো ভাই। তার বিরুদ্ধে শিক্ষাগতযোগ্যতার সার্টিফেক জালিয়াতির অভিযোগ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরোলেও তিনি জেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক পদ পেতে ঢাকার নীলক্ষেত থেকে এসএসসি,এইচএসসি ও অর্নাসের সার্টিফিকেট তৈরী করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জামা দেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় না পেরুনো রুজেল এক সময় নারায়নগঞ্জ শহরের নয়ামাটিস্থ শিল্পি নামক একটি ছাপা কারখানায় কাজ করতেন।
এছাড়া সদস্য সচিব হিসেবে যার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সেই পান্না মোল্লার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এর মধ্যে নিজ দলের নেতাকর্মীদের উপর প্রকাশ্যে গুলি করার অভিযোগসহ ফতুল্লা পিলকুনীতে একটি কবরস্থানের জমি দখলের চেষ্টারও অভিযোগ রয়েছে। গত তিন বছর পূর্বে শাহ আলমের প্রেসক্রিপসনে ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আওয়ামী লীগের দালাল আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে আহবায়ক ও পান্না মোল্লাকে সদস্য সচিব করা হলেও তিন বছরে ওই কমিটি আহবায়ক ও সদস্য সচিব দলীয় কোন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করেনি। তাছাড়া নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একে,এম শামীম ওসমানের মামা শ্বশুড় সাবেক পৌর প্রশাসক মতিন প্রধানের শ্যালক এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ ইয়াসীনের আপন খালাতো ভাই পান্না মোল্লা।
সিদ্ধিরগঞ্জ কলাবাগ পূর্বগ্রামের বাসিন্দা ও সেভেন মার্ডারের আসামী নুর হোসেনের ক্যাশিয়ার হিসেবে খ্যাত শাহ আলম হীরা। তিনি নুর হোসেনের নিয়ন্ত্রিত পরিবহন সেক্টরের চাঁদা আদায়ের দ্ধায়িতে ছিলেন। এছাড়া পরিবারের লোকজন সকলেই আওয়ামী লীগ ঘেঁষা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলেকে একই থানার বিএনপির সদস্য সচিব করতে চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ শাহ আলম হীরাকে সদস্য সচিব করার জন্য লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন।
সূত্র বলছে, শাহ আলম হীরা নিজেও একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি শামীম ওসমান সমর্থক গোষ্ঠীর একজন কর্মী হিসেবে সিরাজ মন্ডলের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। এছাড়া তার মা রাশেদা বেগম সিদ্ধিরগঞ্জ থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদিকা । ভাই বরকত আলী বাপ্পা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার আরেক ভাই খোরশেদ আলম মনা শ্রমিক লীগ ও আন্ত:জেলা ট্রাক চালক সাইলো শাখার যুগ্ম সম্পাদক। এছাড়াও শাহ আলম হীরার স্ত্রীর বড় ভাই সালাম মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই দায়িত্ব পালন করছেন।
তৃণমূল বলছে, বিগত দিনে একটি মামলা, জেলও খাটেনি হীরা। এমনকী কোনো রকম কর্মসূচি পালন করতেও দেখা যায়নি। বরং দলটির নেতাকর্মীরা যখন মামলা খেয়ে ফেরারি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন শাহ আলম হীরা আওয়ামী লীগের হয়ে বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য করে এবং গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। যা পুরো সিদ্ধিরগঞ্জে ওপেন সিক্রেট।
সোনারগাঁ থানা বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে যে মোশাররফের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তিনি বিএনপির সংস্ককার পন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি উপজেলা নির্বাচনে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কালামের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে ভোট চেয়েছিলেন। এ বিষয় স্থানীয় বিএনপি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারাও অবগত রয়েছেন। রূপগঞ্জে কাজী মনিরের প্রেসক্রিপসনে বাসির উদ্দিন বাচ্চুর নাম সদস্য সচিব হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী গোলাম দস্তগির গাজিকে খুশি করতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ছবি তুলে আলোচিত হয়েছিলেন। বিগত দিনে তিনি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, মামুন মাহমুদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দোহাই দিয়ে শাহ আলম ও কাজী মনিরের দেয়া কমিটিতে এড.তৈমুর আলম খন্দকারের স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিলেন। তবে তৈমুর আলম খন্দকার বিষয়টি বুঝতে পেরে মামুন মাহমুদের কাছে জমা হওয়া কমিটিতে স্বাক্ষর করেনি। তার দাবি, বিগত দিনে যারা দলের হয়ে কাজ করেছেন, যাদের আন্দেলন সংগ্রামে কাছে পেয়েছি এবং তারেক রহমানের নিদের্শে যারা আগামীতে রাজপথে থাকবে তাদেরই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে। প্রয়োজন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিষয়গুলো অবগত করা হবে এবং তার দিক নিদের্শনা অনুযায়ি কমিটি গঠন করা হবে।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির হাইকমান্ড বলে পরিচিত মজিদ কমিশনার বলেন যে, নারায়ণগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ন একটি জেলায় হোল্ডিং নাম্বার বিহীন বরিশাল থেকে আগত ব্যাক্তি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদে স্থান দেয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল গুনতে হচ্ছে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের।তাছাড়া তার অধ্যাপনার বিষয়টি নিয়েও সর্বমহলে বিতর্ক রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন........