আলোকিত নারায়ণগঞ্জ:ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ফতুল্লা সড়কে যানজট যেন ফতুল্লাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।
বর্তমানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিণত হয়েছে এটি। দিন দিন এ সড়কে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিশুক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, ট্যাংক লরি, যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ও কাভার্ডভ্যানসহ হাজার হাজার যানবাহন চলাচল বেড়েই চলেছে।দেশের বৃহৎ নিট শিল্পপণ্য এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করে ফতুল্লা বিসিক থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। ফলে যানবাহনের চাপ বাড়ায় যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের দুই পাশ দখল করে আছে অবৈধ দখলদাররা। সড়কের সাথে ফতুল্লা থানার পঞ্চবটি এলাকায় যুক্ত হয়েছে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কটি।কিন্তু এ সড়কে পঞ্চবটি ছাড়া নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশ।
সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের পাশের ডিপিডিসির কার্যালয়, যমুনা ও মেঘনা অয়েল ডিপো এ দু’টি ডিপোর সামনে রাস্তায় অসংখ্য জ্বালানি তেলবাহী ট্রাক দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে। পথে পথে অসংখ্য ওজন স্কেল রয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ইট বালুর ব্যবসা, পাগলা বাজার, মুন্সিখোলা রট-সিমেন্টের ব্যবসা, ফতুল্লা বাজার, ফতুল্লা মডেল থানাসহ অসংখ্য পোশাক কারখানা রয়েছে।এছাড়াও সরকারি তোলারাম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আদর্শ স্কুল, চাইল্ড ল্যাবরেটরি স্কুলসহ ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১০টি ক্লিনিক এবং শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে এই সড়কের দুই পাশে।
বর্তমানে শুধু বিসিকে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক, কর্মকর্তা কর্মরত। ফলে যানবাহনের চাপের পাশাপাশি মানুষের অত্যাধিক চাপের কারণে দুই লেনের সড়কটি এখন ‘যানজটের সড়কে’ পরিণত হয়েছে। তাছাড়া ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত সড়কটিকে মারণফাঁদে পরিণত করেছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে ঢাকার পোস্তগোলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কটি ছিল ঢাকার সাথে নারায়ণগঞ্জ শহরের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। এটি এখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়ক হিসেবে পরিচিত। শুধু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যোগাযোগই নয়, মুন্সীগঞ্জ শহর, মুক্তারপুর শিল্প এলাকা, ফতুল্লা পঞ্চবটির বিসিক শিল্পনগর, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার রফতানিমুখী পণ্য ও কাঁচামাল এই সড়ক দিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরে আনা-নেয়া হয়। কাভার্ডভ্যান, কনটেইনার মুভারসহ ভারী যানবাহন থেকে শুরু করে রিকশা পর্যন্ত চলাচল করে এই সড়কে।
দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল হক বলেন, সড়কটির পাশে পাগলায় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি রড-সিমেন্টের বাজার অবস্থিত। তা ছাড়া সড়কটির ফতুল্লার দাপা এলাকায় বালু, ইট, কয়লা, পাথরের ব্যবসাও রয়েছে। এসব পণ্য নদীপথের পাশাপাশি সড়কপথেও আনা-নেয়া করা হয়। এ ছাড়াও ফতুল্লার পঞ্চবটিতে রয়েছে বিসিক শিল্পনগরী। গুরুত্ব থাকলেও উন্নয়ন নেই।
প্রায়ই সড়কে যানজট লেগে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পণ্যবাহী গাড়ি সড়কে আটকে থাকে যানজটে। এতে এক দিকে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা অন্য দিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আলীম লিটন বলেন, ‘বাজার করতে, ওষুধ কিনতে আসলে মানুষের বিরক্তির শেষ থাকে না। প্রধান সড়ক দখল করে এরা অটোরিকশা স্ট্যান্ড বানিয়েছে। গাড়ি ঠিকমতো আসা-যাওয়া করতে পারে না। যানজট এখানকার নিত্যসঙ্গী। অটোরিকশা স্ট্যান্ড এখান থেকে সরিয়ে অন্য কোন ফাঁকা জায়গায় তৈরি করলে সবার জন্য ভালো হয়।’
কয়েকজন যাত্রী বলেন, ‘তারা প্রায়ই এ সড়ক দিয়ে ফতুল্লা ও পাগলা যাতায়াত করেন। কিন্তু পোষ্ট অফিস আসলে দেখা যায় চরম জ্যাম। চোখের সামনে রাস্তা দখল করে কীভাবে অটোরিকশা স্ট্যান্ড বানিয়েছে সেটি বোধ হয় কারও চোখে পড়ছে না।’
রাস্তা দখল করে থাকা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আবুল মিয়া ও সেলিম হোসেন এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মিজান ও আব্দুল রারেক সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তারা জানান, আমরা কোথায় যাব? দাঁড়ানোর মতো কোনো জায়গা নেই এখানে। বাধ্য হয়ে কখনো রাস্তার পাশে, কখনো রাস্তার ওপরই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। তা না হলে যাত্রী পাওয়া যায় না। প্রশাসন আমাদের অন্য কোন জায়গা দিক, আমরা সেখানে চলে যাব।’
পাগলা এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম মিয়া জানান, এ সড়ক দিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসা-যাওয়া করছে। ফলে সড়কে চাপ বেড়েছে। যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন সাধারণ যাত্রী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাগলা তিন মাথা মোড়ে সব সময় যানজট লেগে থাকে। একই পথ দিয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে সিমেন্টবাহী ট্রাক মুন্সিখোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করে। আবার ওই পথেই ঢাকা –নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ সড়কের বাসও চলাচল করছে। এ কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় সড়কটি ব্যস্ত থাকে। যানজটের কারণে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগের পড়েন । কোনো রোগী হাসপাতালে নিতে ভোগান্তির শেষ থাকে না।
ফতুল্লার লালপুরের বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, ফতুল্লার পঞ্চবটি যানজট নিরসনে রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে শুধু পুলিশ দায়িত্ব পালন করে থাকে। আর বাদবাকি রাস্তায় কী হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। যেমন রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে থাকে। রাস্তা দখল করে পার্কিং, মালামাল রাখা, ইচ্ছেমতো যাত্রী ওঠানো-নামানো, যাত্রীর জন্য বাসগুলোকে বসে থাকা, যেখানে সেখানে আটো স্ট্যান্ডসহ নানা কারণে সড়কে যানজট লেগে থাকে। তাই রাস্তায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি স্থাপন করতে হবে সিসি ক্যামেরাও। কেউ আইন ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে নিতে হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কারণে কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা, চালকের পয়েন্ট কাটা গেলেই মানুষ আইন মানতে বাধ্য। এভাবে সবার মধ্যে অল্পদিনের মধ্যেই সচেতনতা সৃষ্টি হবে। তবেই ফতুল্লায় যানজট পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক করতে হলে দ্রুতই চার লেনের রাস্তার কাজ শুরু এবং শেষ করতে হবে। তবেই হয়তো সম্ভব যানজট কমানো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, এ সড়কটি আসলে আমাদের অধীনে নয়। তবে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র একটি চিঠি দিয়েছেন আমাদের অধীনে দেওয়ার জন্য। চিঠিটা পেয়েছি। আমাদের অধীনে দেওয়া হলে যতটুকু সংস্কারের প্রয়োজন হয় করতে পারবো। পরবর্তীতে আরও ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হলে সেটা আমি পারবো।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. সোহান সরকার বলেন, সড়কটি এখন অনেক সরু হয়ে গেছে। একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। ফলে যানজট লেগেই থাকে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা রাস্তার দুপাশ দখল করে আছেন তাদের আইন মানা প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন........