নারায়ণগঞ্জশুক্রবার , ১৫ অক্টোবর ২০২১
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আওয়ামী লীগে কি আওয়ামী লীগ নেতার ঘাটতি পড়েছে?

Alokito Narayanganj24
অক্টোবর ১৫, ২০২১ ৫:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মো. মনির হোসেন: পাঠক আজ একটি গল্পের মত সত্যি ঘটনা দিয়ে লেখাটি শুরু করলাম, প্রায় দুই মাস আগের কথা হঠাৎ আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা, বেশ কয়েক বছর আগে তার সাথে দেখা হয়েছিল, অনেক বছর পর বন্ধুকে পেয়ে আমি আবেগময় হয়ে গেলাম। অনেক স্মৃতিচারণা হলো। সে কিছুদিন বিদেশ ও ছিলেন, এরই মধ্যে সে অনেক বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে গার্মেন্টস ব্যবসা জমির ব্যবসা ইত্যাদি।তার সাথে দেখা হতেই সে একটি রেস্টুরেন্ট নিয়ে গেল, সে সময় করোনা কমতে শুরু করেছে মাত্র, অর্ডার দেওয়া হল স্যুপ এর জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছ দোস্ত? সে তার উথ্থানের নানা রকমের গল্প শুনাল, খাওয়া ও চলছে, তারপর সে আসল কথাটি শুরু করল, শোনেছি তুই সাংবাদিকতা করছ আমি তোকে মনে মনে খোঁজতে ছিলাম, আমি দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমি বললাম যেমন?পরে সে খোলাসা করলেন, শুনেছি কিছু দিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হবে তাই সে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আমি ভাবলাম, কাভারেজ-টাভারেজ চাইবেন। মনে মনে ভেবেও নিলাম, প্রয়োজনে একদিন তার মিছিলের ছবি ছাপিয়ে দেওয়া যাবে।
কিন্তু সে আমাকে চমকে দিয়ে বললেন, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও সহায়তা লাগবে না। সে মনোনয়ন সংক্রান্ত সহায়তা চান। আমার দৃষ্টিতে বিস্ময় দেখে সে ব্যাখ্যা করলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই জয় নিশ্চিত। তাই মূল লড়াইটা হয় মনোনয়নের টেবিলে, নির্বাচনের ময়দানে যা হয় সব সাজানো। এবার সে আরও খোলাসা করলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে টাকা লাগে। টাকা দিতে তার আপত্তি নেই। প্রয়োজনে বেশিই দেবেন। কিন্তু সমস্যা হলো, এই কৌশলে অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও টাকা নিয়ে বড় বড় নেতাদের কাছে যাবেন ।
আমার কাছে তার চাওয়া হলো, টাকা দিলে মনোনয়ন যাতে নিশ্চিত হয়, সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া, তার কারণ, টাকা দিয়ে মনোনয়ন না পেলে পরে আর সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। তুই সাংবাদিক তোদের সাথে নয় ছয় করতে পারবে না। আমি মনে মনে বিরক্ত হলেও সেটা গোপন করে বললাম, দোস্ত টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কেনা যায়, এমন খবর আমার জানা নেই। আর আমি বলে দিলে তুই মনোনয়ন পাবি এমন কোনও যোগাযোগও আমার নেই। ও একটু মনঃক্ষুণ্ন হল, এবং সে বলল তোরা এত কিছু লিখিছ, আর এসব খবর জানিস না, শোন ২০১৮ সালের একটি ঘটনা বলি তোকে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী কেরামত আলী তার দলীয় পদটি ছোট ভাই কাজী ইরাদত আলীকে লিখে দিয়েছেন।পত্রিকা ও অনলাইন গুলিতে এ ঘটনা ছাপা ও হয়েছে, টাকায় সব হয় বুঝলি, এখন তুই পারবি কিনা সে কথা বল? আমি কোন রা করলাম না, কিছুক্ষন বসে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম, যদি ও ঘটনাটি ২০১৮ সালের হয়ত আমার মনে নেই, পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ঘটনা মিথ্যা নয়।
কেরামত আলী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেই পদই ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ভাইকে লিখে দেন তিনি। দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ঘটনা ঘটে। সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার হুমকি দিয়ে ইরাদত আলী ভাইয়ের ওপর চাপ তৈরি করেন। তিনি তখন জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলীয় মনোনয়নে ছোট ভাই যাতে বাগড়া দিতে না পারেন, সেজন্য নিজের পদ লিখে দেন কেরামত আলী। তিনি এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। জানতে চাইলে সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ছোট ভাই আবদার করেছিল, তাই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। সে (ইরাদত) নিজেই ৩০০ টাকার একটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সব কিছু লিখে এনেছিল। আমি সই করে দিয়েছিলাম। ’ এ বিষয়টি দলের গঠনতন্ত্র অনুমোদন করে কি না, জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের আবদার ফেলতে পারিনি। একটি পত্রিকার আরকাইভ খোজ করে লেখাটি পেলাম।
পাঠক মনে মনে ভাবলাম এটা কিভাবে সম্ভব আওয়ামীলীগ একটা গণতান্ত্রিক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে ছিল, তৃণমূল, ও দলের ত্যাগী নেতাদের কারনে দলটি অনেক বছর ধরে আবার ক্ষমতায়, আর সেই দলটির কিছু কতিপয় নেতার কারনে এই অবস্থা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে টাকা লাগে। পুরো বিষয়টাই এখন ওপেন সিক্রেট। দেশজুড়ে এখন দফায় দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়েও নানান কথা বাতাসে। স্থানীয় পর্যায় থেকে নামের তালিকা পাঠানো হয় কেন্দ্রে। কেন্দ্র সেই তালিকা থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। তবে সেই তালিকার বাইরের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ক’দিন আগে স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর নাম পাঠান। টাকা খেয়ে খারাপ লোকের নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন না।’
তার মানে বিষয়টা পরিষ্কার, টাকা খেয়ে নাম পাঠানোর ঘটনা ঘটে। আর ঘটনা যে ঘটে সেটা পত্রপত্রিকায় চোখ রাখলেই বোঝা যায়। ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে শুধু একজনের নাম পাঠানো হয়েছে, তাও আবার সে বিএনপির।চলুন কয়েকটি পত্রিকার শিরোনামে চোখ বুলিয়ে আসি, ‘সিলেটে এককালের শিবির নেতা এখন নৌকার প্রার্থী’, ‘ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পেলেন নৌকা প্রতীক’, ‘আওয়ামী লীগের তালিকায় বিএনপির সাবেক নেতা’, ‘তৃণমূল নাম না দিলেও মনোনয়ন পেলেন প্রবাসী। ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হলেন বিএপির সেন্টু, চাইলে এ তালিকা আরও অনেক লম্বা করা যাবে। কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝলাম না, টাকা খেয়ে বিএনপি বা শিবির নেতাকে মনোনয়ন দিতে হবে কেন? আওয়ামী লীগে কি টাকা দেওয়ার মতো নেতার অভাব রয়েছে। নাকি শিবির, ছাত্রদলের রেট বেশি? আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কি নিলামে বিক্রি হয়?
জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর সিলেটে এখন উত্তেজনা। টাকার বিনিময়ে কমিটি ঘোষণার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগেরই একাংশ বিক্ষোভ করছে। নতুন কমিটির নেতাদের বাসায় ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের বঞ্চিতরা। যেকোনও সংগঠনের কমিটি ঘোষণার পরই কিছু নেতা নিজেদের বঞ্চিত মনে করেন। কিন্তু সিলেটের বিক্ষোভটি তেমন সরল নয়। এখানে টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে।
আওয়ামী লীগে বহিরাগতদের ‘হাইব্রিড’ বা ‘কাউয়া’ বলা হয়। এই টার্ম দুটিকে জনপ্রিয় করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ‘হাইব্রিড’ আর কাউয়াদের ব্যাপারে দলে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ ওবায়দুল কাদের। এই ক’দিন আগেও তিনি বলেছেন, ‘দুঃসময়ে বসন্তের কোকিলরা দলে থাকবে না, ত্যাগীরাই সুখে-দুঃখে দলের পাশে থাকবে। ওবায়দুল কাদের বছরের পর বছর ‘হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে বলছেন বটে। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগে তাদের অনুপ্রবেশের স্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। ঠেকায় পড়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরদের মতো দুয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সাধারণভাবে হাইব্রিডদের চিহ্নিত করে তাড়ানো বা দলে হাইব্রিডদের পৃষ্ঠপোষক নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হেলেনা জাহাঙ্গীর বা সাহেদের মতো লোকেরা কীভাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে ঠাঁই পেলো, এই প্রশ্নের জবাব নেই। অথচ ওবায়দুল কাদেররা চাইলে মুহূর্তে হাইব্রিড এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করতে পারেন।
অবস্থাটা মনে হয় এমনই, যিনি বেশি টাকা দেবেন, যে দলই করুন তিনিই মনোনয়ন পাবেন। একযুগ ক্ষমতায় আছে বলেই নয়, বরাবরই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি তার তৃণমূল। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাংগঠনিক ভিত্তিই বিভিন্ন বিপর্যয়ে দলকে টিকিয়ে রেখেছে। একযুগ ক্ষমতায় থাকার সুযোগে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করতে পারতো আওয়ামী লীগ। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উল্টো। আওয়ামী লীগের তৃণমূলে এখন হাইব্রিডের ভিড়। নানান সুযোগ-সুবিধা পেতে, মামলা থেকে বাঁচতে বিএনপি, জামায়াত, শিবিরের নেতারা এখন ভিড়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগে। দ্রুত তারা চলে আসছে সামনেও। সবাই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাইবে, ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিতে চাইবে। কিন্তু সিদ্ধান্তটা আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে, তারা কাকে নেবে, কাকে নেবে না বা আদৌ বাইরের কাউকে নিতে হবে কিনা। দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতেই তো আওয়ামী লীগের দম ফেলার সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। অন্য দলের নেতাদের আওয়ামী লীগে নিতে হবে কেন? আওয়ামী লীগে কি আওয়ামী লীগ নেতার ঘাটতি পড়েছে? বছরের পর বছর যারা দলের জন্য ত্যাগ করেছেন, দল এখন তাদের ত্যাগ করছে। আওয়ামী লীগের মাঠে এখন ফসলের চেয়ে আগাছা বেশি।
সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা দিয়ে লেখাটি শেষ করি। ২০১৮ সালের রাজবাড়ী-১ আসনের ঘটনাটি । আওয়ামী লীগ কি কারও পৈতৃক সম্পত্তি যে চাইলেই স্ট্যাম্পে সেটা লিখে দেওয়া যায়? শুধু আওয়ামী লীগ কেন, বিশ্বের কোনও সংগঠনেই স্ট্যাম্পে লিখে ছোট ভাইকে পদ দেওয়ার কোনও নজির নেই। সে ক্ষেত্রে এটি আওয়ামী লীগের দেউলিয়াপনার বিশ্বরেকর্ড । তবে ওবায়দুল কাদের যে দুঃসময়ের কথা বলেছেন, তা আসার আগেই বসন্তের কোকিলদের তাড়াতে হবে, দল পরিষ্কার করতে হবে, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। নইলে দুঃসময় প্রলম্বিত হতে পারে।
লেখক ও সাংবাদিক
সিনিয়র সহ-সভাপতি
ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!