নারায়ণগঞ্জসোমবার , ১২ ডিসেম্বর ২০২২
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

আমাদের দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা!

Alokito Narayanganj24
ডিসেম্বর ১২, ২০২২ ৮:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মো. মনির হোসেন:ক্রমেই সামাজিক অবক্ষয় আমাদের অনেকটা বিধ্বস্ত করে ফেলছে যেন। দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ঔজ্জ্বল্যকে নানা নৈরাজ্য অনেকটা বিবর্ণ করে ফেলছে। ঘুষ-দুর্নীতি এ দেশের ইতিহাসে পুরনো রোগ। তবে একসময় ঘুষখোররা লুকিয়ে ঘুষ খেত। বাবার অপকীর্তির জন্য সন্তানরা লজ্জিত থাকত। এখন অনেক সন্তানই বাবার অবৈধ সম্পদের জোয়ারে আনন্দে আর গর্বে ভাসে, স্ত্রীরা অনেক খুশি, অনেকের স্ত্রীরা নিজেকে নেত্রী হিসেবে ভাবেন।

আমাদের দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা কতটুকু সঠিক? কোন যোগ্য লোক কি নির্বাচিত হতে পারে? আমি সারা দেশের স্থানীয় নির্বাচনের কথা কথা বলছি, জাতীয় নির্বাচন না হয় আলাদা করে রাখলাম সেটা আমাদের গর্বের বিষয়, অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করে ৫১ বছরে এসে আমরা যে গনতন্ত্র পেয়েছি তা নিয়ে তা নিয়ে আমরা সাধারণ জনগণ খুবই ভালো আছি।

তবে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তাহলে তাতেই আমাদের স্বস্তি ও সন্তুষ্টি। সেই সুষ্ঠু নির্বাচনে যে পদে যে দলের প্রার্থীই বিজয়ী হোন আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু এখন আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা যেখানে গেছে সেটি বলতে গেলে একটি দুঃস্বপ্নের মতো।
প্রথমত আলোচনা করা যাক একজন ইউ, পি সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে, ধরুন সে নির্বাচিত হতে গিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকা নির্বাচনে ব্যয় করেছেন, যদি ও নির্বচন কমিশন কর্তৃক তার একটি নির্বাচনী ব্যয় (লোক দেখানো)বেধে দেওয়া হয়েছে, আর সে টাকাতে তো সে নির্বাচন করলে নির্বাচিত হতে পারবে না, কারন তার প্রতিদন্ধী প্রার্থী তার চেয়ে ও বেশী ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত। এখন প্রশ্ন হলো এ ব্যয় সে কিভাবে করবে? ধরা যাক সে নির্বাচন অফিস থেকে ফরম কেনা, সাথে বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে শো ডাউন করা, পোস্টার ফেস্টুন, লিফলেট বিতরন করা, কর্মীদের জন্য ক্যাম্প তৈরী করা, নিজের এলাকাতে একাধিক প্রার্থী থাকলে তাকে অর্থের বিনিময় ম্যানেজ করা, প্রতিদিন ছোট আকারে মিছিল করা, আবার প্রতিদন্ধী প্রার্থীর চেয়ে বেশী জনবল নিয়ে মিছিল করা, প্রতিদিন কমপক্ষে ত্রিশ জন কর্মী বাহিনী অর্থের বিনিময়ে তাদের দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা করা, সর্বশেষ উপদেস্টাদের পরামর্শে কিছু এলাকা থেকে কিছু ভোট কেনা, পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ইত্যাদি ব্যয় আবার আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে(শিক্ষিত অশিক্ষিত) প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য তৈরি হয়েই থাকেন।

এখন প্রশ্ন হলো তিনি যে প্রায় দশ লক্ষ টাকা ব্যয় করলেন সেটা হয়তো তার পকেটের অথবা জমি বিক্রি করে যেখান থেকেই হোক সে নির্বাচিত হওয়ার জন্য এ ব্যয় করেছেন। এখন নির্বাচিত হয়ে এ ব্যয় করা টাকা সুদে আসলে উঠানোই তার প্রধান লক্ষ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এখন ধরা যাক একজন ইউপি সদস্যের আয়ের পথ কি হতে পারে, যেমন ট্রেড লাইসেন্স করে দেওয়া, নিজ এলাকাতে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পাওয়া এবং জনগনের থেকে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ কমপ্লিট করা, জমির ব্যবসা করা ইত্যাদি। উদাহরন হিসেবে একজন ইউপি সদস্যের নির্বাচনী ব্যবস্থা তুলে ধরা হলো। তবে যতো যোগ্যতা সম্পন্ন লোকই হোক সে কি এই ব্যয় ছাড়া নির্বাচিত হতে পারবেন? যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা কি ভোট দেই?

আমার জানামতে, দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে ও দেখছি নির্বাচনে টাকার খেলা বিশেষ করে সাংবাদিক, আইনজীবিদের মতো ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের ভোট প্রদান করা হয়।

তবে যাঁরা ১৯৫৪ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত জাতীয় পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের স্মৃতিচারণা করতে পারেন, তাঁরা বলবেন, নির্বাচনী ব্যয়ের সহজ সীমারেখা টানা যেত তখন। খরচের ক্ষেত্রগুলো কী ছিল? বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র বানানো। এখানে বিড়ি, চা আর টোস্ট বিস্কুটের ব্যবস্থা রাখা। ব্যানার-ফেস্টুনের ব্যবস্থা করা। যে কর্মী বাহিনী চোঙা ফুঁকে নির্বাচনী মিছিল করবে তাদের চা-নাশতা আর সময় বিশেষে ভাত খাওয়ার বন্দোবস্ত করা। এর বাইরে অদৃশ্য কোনো খরচ যদি থেকেও থাকে, তবে তা এতই ব্যতিক্রম যে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থায় এর তেমন প্রভাব পড়ত না। এ পর্বে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার থেকে শুরু করে জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা সাধারণভাবে নিজেদের জনগণের নেতা বা সেবক ভাবতে অভ্যস্ত ছিলেন। নির্বাচনে যেটুকু ব্যয় হতো তা তাঁদের সাধারণ বাজেটের অন্তর্গত হিসেবেই মেনে নিতে অভ্যস্ত ছিলেন। নির্বাচনে জেতার পর বাজেটের ক্ষতিপূরণ নিয়ে তাঁদের কোনো ভাবনা থাকত না। আর্থিক সামর্থ্যহীন জনপ্রিয় নেতারা তখন মূল্য পেতেন। তাঁদের নির্বাচনী ব্যয় কিছুটা দল, কিছুটা সামর্থ্যবান এলাকাবাসীই বহন করত। এ কারণে বিরাট নির্বাচনী ব্যয়ের দায় মাথায় বইতে হতো না বলে সুদে-আসলে টাকা উসুলের দায়িত্বও বহন করতে হতো না। বেশির ভাগ নেতা নিজেদের জননেতাই মনে করতেন। জনকল্যাণকে তাঁরা ব্রত হিসেবে মানতেন।

পরিশেষে এ বলে শেষ করতে চাই যে নির্বাচনে এমন উন্মুক্ত টাকার খেলাই জন্ম দিচ্ছে রাজনৈতিক দুর্নীতির, কালো টাকাকে পরোক্ষ অনুমোদন দিতে হচ্ছে, সন্ত্রাসী পুষতে হচ্ছে, দুর্নীতিপরায়ণ আমলা আর অসাধু ব্যবসায়ীকে রাষ্ট্র আর দলের নীতিনির্ধারক বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব বাস্তবতার কারণে আজ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতানেত্রীর প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে, যদি আপনাদের মধ্যে সামান্যতম দেশপ্রেম অবশিষ্ট থাকে এবং দেশে যদি প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান, তবে টাকার খেলা আর সন্ত্রাসী পোষার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসুন। বিপুল কালো টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রি বন্ধ করুন, তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে কাউকে অন্যায় সুবিধা দিতে হবে না। অর্থবিত্তের গুণে নয়, জননেতার গুণাবলি বিচারে প্রার্থী নির্বাচন করুন। ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার মধ্য দিয়ে রাজনীতিকে মোকাবেলা করুন।

লেখকঃ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও
সাধারণ সম্পাদক ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!