আলোকিত নারায়ণগঞ্জ : টাকা আর টাকা। হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন। এ মুহুর্তে টাকার লেনদেনে সবচেয়ে বড় নামটিই হচ্ছে গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম। যাকে এখন মানুষ চিনে টেন্ডার কিং জিকে শামীম নামে। তার হাজারো কোটি টাকার হিসাবে নারায়নগঞ্জের একটি ব্যাংকেই জমা রয়েছে শতকোটি টাকা। এ যেন রূপকথা সিনেমাকেও হার মানায়।
জিকে শামীমকে গ্রেফতারের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এরই ধারাবাহিকতায় জানা গেছে ৩৪টি ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার । প্রতিষ্ঠানসহ পরিবারের লোকজনের নামে কেবল নারায়ণগঞ্জের একটি ব্যাংকেই মোট ১৪টি একাউন্ট রয়েছে। যার মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় ৮টি একাউন্টে টাকা লেনদেন হয়েছে। আর এসব কিছুই সেই টেন্ডার কিং খ্যাত গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমের।
জিকে শামীমের নারায়ণগঞ্জের একটি ব্যাংকে একাধিক একাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের হিসাব পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলোতে নিজের প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানিসহ আত্মীয়-স্বজনের নামেও অ্যাকাউন্ট খুলে শত কোটিরও বেশি টাকা জমিয়ে রেখেছেন তিনি। তা ছাড়া কয়েকটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে যৌথভাবে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, জিকে শামীমের ঠিকাদারি জগতে উত্থান জামাল অ্যান্ড কোংয়ের মাধ্যমে। যার মালিক নোয়াখালীর জামাল হোসেন। জি কে শামীম ও জামাল সিন্ডিকেট করে নোয়াখালীতে বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজের টেন্ডার পান। জামাল ও জি কে উভয় প্রতিষ্ঠানের দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
গত শুক্রবারের অভিযানের পর তদন্তে নেমে জিকে শামীমের ব্যাংক হিসাব দেখে বিস্মিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। তার ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। পুলিশ ও র্যাবের প্রাথমিক তদন্তেও একই চিত্র উঠে এসেছে।
এ ছাড়া পুলিশের এজাহারেও ব্যাংক হিসাবের তালিকা ও জমা এবং এফডিআর করা অর্থের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সে বিবরণে দেখা যায়, জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠানসহ তার পরিবারের লোকজনের নামে কেবল নারায়ণগঞ্জের একটি ব্যাংকেই মোট ১৪টি একাউন্ট রয়েছে। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে জি কে শামীম কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। যার মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় ৮টি একাউন্টে টাকা লেনদেন হয়েছে। ট্রাস্ট ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখার ০০৩৫০২১০০০৩০৮৩, ০০৩৫০২১০০০৩০০১, ০০৩৫০২১০০০০৩০৮, ০০৩৫০১৩৬০০০০৩৯, ০০৩৫০২১০০০২৬৪৬, ০০৩৫০৩১৮০০১৪৭০, ০০৩৫০২১০০০৪৬৪৪, ০০৩৫০২১০০০৪০১৯ হিসাবে এসব অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি এই বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এ ছাড়া শামীমের মা আয়েশা আক্তারের নামের ট্রাস্ট ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখায় ৩০৬৮৪০১৪৮১৯ হিসাবে ২৫ কোটি, ০০৩৫০৩৩০০২১৫২৩ নম্বর হিসাবে ২৫ কোটি, ০০৩৫০৩৩০০২১৫৩২ এই নম্বরে ২৫ কোটি, ০০৩৫০৩৩০০২১৫১৪ নম্বর হিসাবে ২৫ কোটি, ০০৩৫০৩৩০০২১৫০৫ হিসাবে ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার এফডিআর করা হয়। জানা গেছে, ট্রাস্ট ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গেও যৌথভাবে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় (নম্বর ০০৩৫০২১০০০৩০০১)।
প্রসঙ্গত: গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে শামীমের জিকেবি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসে অভিযান চালায় র্যাব।
র্যাব সূত্র জানায়, শামীমের অফিসের ভেতর থেকে নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত) চেক ও ১শ’ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর তার মায়ের নামে, বাকি ২৫ কোটি টাকা তার নামে। এছাড়া মার্কিন ডলারও উদ্ধার করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন........