মোঃ মনির হোসেন: গ্রাম বাংলায় একটা কথা রয়েছে, তা হলো ব্যাঙ মরে ডাকের দোষে। গ্রামে আষাঢ় শ্রাবণ মাসে নালা খন্দক, পুকুর ডোবায় যখন ব্যাঙ ডাকে ( চিৎকার করে) তখন গ্রামের দুষ্ট ছেলেরা দল বেঁধে ঐ সব এলাকায় ব্যাঙের প্রতি ঢিল ছুঁড়ে মারে । কিন্তু তাদের (খেলার চলনে) ঢিলে ব্যাঙ যে মারা যাচ্ছে তা ছেলেরা বুঝে না। এখানে ব্যাঙের দোষ হলো সে কেন বেফাঁস চিৎকার করবে ।
অনুরূপ আমাদের দেশের কতিপয় প্রখ্যাত ব্যক্তিরা কখনও কখনো বেফাঁস কথা বলে ফেলেন । যা ব্যাঙের মরণের মত ফাঁদ সৃষ্টি হয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালীন সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলে ফেললেন আল্লার মাল আল্লা নিয়ে গেছে। যে কথা সারা দেশে ঝড় তুলেছিল। একইভাবে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিীকী ধর্মীয় আঘাত পাওয়ার মত ফাউল এক কথা বলে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছিলো। শেষে তাঁকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় ।
অনুরূপ তত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিক বলে বহু অহংকারবোধ করে মতিউর রহমানের সম্পাদনায় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এ দৈনিকটি নবীর ব্যঙ্গ কার্টুন (আলপিনে) ছেপে দেশের মানুষের কাছে তোপের মুখে পড়ে । এ দৈনিকটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য তত্বাবধায়ক সরকার যখন ফাইনাল সিদ্ধান্তে উপনীত তখন আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুলের সহায়তা এবং বুদ্ধি অনুযায়ী প্রথম আলোর সম্পাদক বায়তুল মোকারমের বড় হুজুরদের হাতে পায়ে চুমো খেয়ে , তওবা তিল্লা করে ক্ষমা চাইলেন দেশের মানুষের কাছে । তখন হুজুরের কথায় দেশের মানুষ শান্ত হন।
সে যাই, হোক ব্যাঙ মরে ডাকের দোষে এ কথা অনেকটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে এনডিপির সাবেক প্রেসিডেন্ট , বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষেত্রে।
যদিও রাজাকারের দায়ে সাকার ফাঁসী হলেও বাঙালি সমাজে বিশেষ করে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, লালন করে, সাকা চৌধুরীর ফাঁসি হয়েছে বেফাঁস মন্তব্যের কারনে (মুখের দোষে) কেননা সাকা চৌধুরী ধরা’কে সরা জ্ঞান মনে করতো । তাঁর কাছে মহামান্য আদালত , জাজ, মন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী সব কিছুই ছিলো তুচ্ছ । তাই যা মুখে আসতো তা বলে ফেলতেন । যা তাঁর জন্য কাল হলো ।
আমাদের দেশে নাম করা অনেক ব্যক্তি , যাঁরা বিভিন্ন কারণে অকারণে খ্যাত প্রখ্যাত। কেউ রাজনীতিতে কেউবা আবার ধন সম্পদ ব্যবসা বাণিজ্যে এ জাতীয় বেফাঁস মন্তব্য করেন।
চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারী ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, “ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান, সেখান থেকে কত টাকা নিজে নেন, পুত্রের নামে নেন, পুত্রবধূর নামে লাখ লাখ টাকা নেন; সেই হিসাব আমি জনসমক্ষে তুলে ধরব।”
এসব মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক এই নৌমন্ত্রী।
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানের ‘গাঞ্জা’ আবিস্কারে চারদিকে ছি ছি রব উঠেছে। তিনি একটি স্কুলের সভায় বলেন ‘রশীদ ভাই গেছেন গাজার নৌকা তাল গাছে তুলতে’। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে জাতীয় পার্টির এমপি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এত কিছু থাকতে তিনি গাঞ্জা উচ্চারণ করলেন কেন। তবে জানিনা এগুলো বেফাঁস মন্তব্যের আওতায় পরে কি না। তবে দায়িত্বশীল মান্যবর ব্যক্তিগণ যখন কিছু মন্তব্য করবেন, তখন একটু সহনশীল হলে ভাল হয় না ?
লেখকঃ সাংবাদিক, কলামিস্ট
সিনিয়র সহ সভাপতি ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।
আপনার মতামত লিখুন........