আলোকিত নারায়ণগঞ্জ:বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার তিন ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির স্রোতে দুটি ভবন ধসে পড়েছে। আরও দুটি ভবন হেলে পড়েছে। ভবনে থাকা আসবাবপত্র বের করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি পরিবার।
বৃহস্পতিবার (০৬ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফতুল্লার তিন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে কয়েক হাজার মানুষকে পানিবন্দি দেখা যায়। অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে মঙ্গলবার রাতে ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংপুর এলাকার হাজারো বাড়িঘর তলিয়ে যায়। এতে উত্তর নরসিংপুরের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে অবস্থান করছেন। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন।
এদিকে হঠাৎ পানির স্রোতে মৃত রতনের স্ত্রী লাকি বেগমের শেষ সম্বল একতলা ভবনটি ধসে পানিতে তলিয়ে যায়। অল্পের জন্য দুই সন্তান নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাড়ির আসবাবপত্র বের করতে পারেননি। খবর পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল ও ইউনিয়ন সদস্য শামীম আহম্মেদ পানিবন্দিদের খোঁজখবর নিয়েছেন।
একই উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকাসহ তিন গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির স্রোতে পূর্ব গোপালনগর এলাকার মানিক মিয়ার একতলা ভবন ধসে গেছে। ভবনে থাকা সব ধরনের আসবাবপত্র পানিতে তলিয়ে গেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়েছেন মানিক। ভবন ধসে পড়ায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
এছাড়া এনায়েতনগর ইউনিয়নের তিন এলাকার পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। অনেকের ঘরে কোমর পর্যন্ত পানি। কারও কারও বাড়িতে হাঁটুপানি। অনেক বাড়ি একেবারে তলিয়ে গেছে। দুটি ভবন হেলে পড়েছে। যেকেনো সময় ধসে পড়বে এই দুটি ভবন।
স্থানীয় আমেনা বেগম বলেন, উত্তর নরসিংপুরে বসবাস করছি আমরা। বন্যার পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। আমার তিনটি ঘর পানির নিচে। স্বামী-সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছি। এখানে আমাদের আত্মীয়-স্বজন না থাকায় রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাইনি।
পানিবন্দিদের খোঁজখবর নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অনেকের বাড়িতে গেছেন। পানিবন্দিদের খোঁজখবর নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক।
কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল বলেন, বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে গেছে। কয়েকশ গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতা দেয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক বলেন, বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে তিনটি ইউনিয়নের কয়েকশ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে পানিবন্দি পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে সহযোগিতা দেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন........