আলোকিত নারায়ণগঞ্জ : বাড়িভর্তি হাজারো স্বজন আর গ্রামবাসী। শোক আর কান্নায় মাতোয়ারা বাড়ির আঙ্গিনা। চলছে শেষ গোসলের প্রস্ততি। সে অবস্থায় বাবার একমাত্র মেয়ের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার চূড়ান্তক্ষণ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে পরিজনদের হ্যাঁ-না দোটানা সিদ্ধান্তকালে জ্যোতির কানে বেজে উঠে বাবার অতীতের কিছু কথা।
তার বাবা তাকে বলেছিলেন ‘লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে হবে’। এ কারণে বাবাকে শেষ বিদায় দেয়ারকালে উপস্থিত না থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটে আসে জ্যোতি। কান্নারত অবস্থায় শেষ করে পুরো পরীক্ষা। ততক্ষণে জানাজা আর দাফন হয়ে গেছে তার বাবার। উপজেলার হাটাব মধ্যেপাড়া এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, হাটাব মধ্যেপাড়া এলাকার হারেজ মিয়ার ছেলে জামান মিয়ার (৪১) হঠাৎ শ্বাসনালীতে ছিদ্র ধরা পড়ে। গত কয়েকদিন যাবত তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। রোববার রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জামান। সোমবার সকাল ১১টায় তার জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ের মধ্যে জামান মিয়ার সবচেয়ে আদরের সন্তান ছিল তার মেয়ে জ্যোতি আক্তার। তিনি বলতেন, আমার ঘরে বেহেশত এসেছে। মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত বানানোর স্বপ্ন দেখতেন তিনি। জ্যোতিকে বলতেন. ‘মা তোমাকে পড়ালেখা করে অনেক বড় হতে হবে’।
হাটাব দক্ষিণ বাড়ৈ শিশু নিকেতন ব্র্যাক স্কুলের এবার পিএসসি পরীক্ষার্থী জ্যোতি সোমবার বাংলা বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাড়িতে বাবার লাশ ফেলে শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া শিশু জ্যোতি পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় সারাক্ষণ কান্নারত অবস্থায় পরীক্ষা সমাপ্ত করে।
পরীক্ষা শেষে পরীক্ষা কেন্দ্র কাঞ্চন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হল সুপার ও শিক্ষকগণ তার এ সাহসী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যোতি জানায়, তার বাবা তাকে অনেক ভালবাসত। তার বাবা চাইত সে যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হয়। এখন চূড়ান্ত এ পরীক্ষা না দিলে তার বাবার আত্মা হয়তো কষ্ট পেত। এ কারণে নিজেকে কষ্ট দিয়ে বাবাকে বিদায় না দিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে সে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, শিশুটির বাবা এমন সময় মারা গেছেন সেটা খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও শিশুটি বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমরা তার পরীক্ষার সময় যতটা সহযোগিতা দরকার করেছি। হল সুপার পুরো সময় শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন........