নারায়ণগঞ্জবৃহস্পতিবার , ৩ জানুয়ারি ২০১৯
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে

Alokito Narayanganj24
জানুয়ারি ৩, ২০১৯ ৮:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রণজিৎ মোদক : ভর্তি চলছে, ভর্তি চলছে, ভর্তি চলছে, ‘ক’ মডেল স্কুলে ভর্তি চলছে, সভাপতি-‘খ’ চেয়ারম্যান। দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার এবং এর পার্শ্ববর্তী প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে চোখে পড়বে এ রকম ব্যানার, ফেস্টুন। একজন সরকার প্রতিনিধি যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা প্রদানের চেয়ে উপরি আয়ের নিমিত্তে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বেশি মনোযোগ প্রদান করেন তবে তা নিঃসন্ধেহে ভাবনার বিষয়। আর সেটা যদি হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তবে এর ফলাফল সুনিশ্চিতভাবেই ভয়াবহ।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জাতীয়করণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনাকে প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারীকরণ ও এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী জনগণকে সার্বিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত অবৈতনিক ও একই পদ্ধিত বা মানের প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৎকালীন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৩৬০১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সরকার প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য এ সকল বিদ্যালয়গুলোর ১ কোটি ৬০ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান, ২০১০ সাল থেকে বিনামুল্যে বই বিতরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ২১৯ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দসহ স্কুলফিডিং কার্যক্রম, শিশু কল্যান ট্রাস্টের ন্যায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান সত্ত্বেও শহর থেকে শুরু করে গ্রামের আনাচে-কানাচে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কদর বাড়ছে। শিক্ষার্থী সংকটে ভূগতে হচ্ছে অনেক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। যেখানে অধিক দূূরত্বে সরকারী স্কুল রয়েছে সেখানে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নীতিমালা মেনে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল স্থাপন কতটা যৌক্তিক? অভিভাবকরাও বেসরকারি স্কুলের উপর আস্থাশীল হয়ে পড়ছেন। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার তাদের সন্তানদেরকে সরকারী স্কুলগুলোর চেয়ে বেসরকারি স্কুলে পাঠানোটা বেশি উপযোগী মনে করছেন।

বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা নার্সারি, প্রিপারেটরি, কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন ও পরিচালনার উদ্দ্যেশে ২০১১ সালে সরকার ‘বেসরকারি প্রাথমিক (বাংলা ও ইরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা-২০১১’ শীর্ষক বিধিমালা জারি করে। কিন্তু অল্পসংখ্যক বেসরকারি স্কুল উক্ত বিধিমালার আওতায় আসে। উপরন্তু নীতিমালা উপেক্ষা করে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো শহরে, গ্রামে চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে উঠছে ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যাদের অধিকাংশেরই শিশুদের খেলাধুলা বা চিত্ত বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। পরবর্তীতে, বাণিজ্যিক এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবাধ বেড়ে ওঠা নিয়ন্ত্রনের নিমিত্তে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি প্রাথমিক ‘বেসরকারি প্রাথমিক (বাংলা ও ইরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা-২০১১’ অনুযায়ী বিদ্যমান সকল নার্সারি, প্রিপারেটরি, কিন্ডারগার্টেন যাচাইক্রমে করণীয় নির্ধারণপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বিভাগ/মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠনের জন্য ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এখন সময় এসেছে উল্লেখিত বিধিমালা ও টাস্কফোর্স কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে তা বিবেচনা করার।

এ ধরনের চিত্র যে শুধু প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেই, তা ঠিক নয়। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই একই দশা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দেশে ৪০টি সরকারী এবং ৯৫টি প্রাইভেট (ব্যক্তি মালিকানাধীন) বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা এসমস্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটুকু মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করছে সেটাও বর্তমান সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে পথে-ঘাটে যেভাবে পরগাছার আদলে ব্যবসায়িক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থা লোপ পাবে এবং দরিদ্র মানুষের পক্ষে লেখাপড়া করাটা কল্পকাহিনীতে রূপ নিবে।

সরকারের উচিত এসব বাণিজ্যিক ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক বেড়ে উঠার সংস্কৃতির লাগাম টেনে ধরা। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা, তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা ও স্থানীয় সরকারের সহায়তায় দেশের সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে যুগোপযুগী শিক্ষাদানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলাটা সময়ের দাবি। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটের ফলপ্রসূ ব্যবহার নিশ্চিত করাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারী অর্থের সুষ্ঠ ব্যবহার ও শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়নে জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে সার্বিক সহায়তা করটা অত্যন্ত জরুরী।

রণজিৎ মোদক
শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!