নারায়ণগঞ্জরবিবার , ৭ নভেম্বর ২০২১
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সারা দেশে ক্রিকেট নিয়ে জুয়া ! যুব সমাজ ধ্বংসের মূখে

Alokito Narayanganj24
নভেম্বর ৭, ২০২১ ১০:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কাজী আনিসুর রহমান: মাদক আমাদের সমাজে চরম বিরূপ প্রভাব যে ফেলে তার প্রমাণ রয়েছে অসংখ্য, দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে প্রায় প্রতিনিয়তই মাদকের কারণে পরিবার ও সমাজের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দুর্ভোগের কালো ছায়া, মাদকাসক্ত ব্যক্তির হাতে মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়তই, মাদকের কারণে আমাদের দেশে অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হচ্ছে, এর পাশাপাশি নতুন করে শুরু হয়েছে ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়া, যা এখন যুব সমাজকে মারাত্মক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গত শনিবার সকালে ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার একটি চায়ের দোকানে বসে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ভুলের সমালোচনা করছেন একজন। গত শুক্রবার বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলার যেন প্রতিটি বলের হিসাব রয়েছে তার কাছে, পাশাপাশি এক সেলুন ব্যবসায়ী জানালেন ওই ম্যাচে তার লোকসান হয়েছে ১০ হাজার টাকা, তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই ম্যাচকে ঘিরে দেশের পক্ষে ১০ হাজার টাকা বাজি ধরেছিলেন তিনি, কিন্তু বাংলাদেশ দল হেরে যাওয়ায় ওই লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে।

তবে সে জানান, এই বাজি ব্যক্তি পর্যায়ে না, বাজি ধরেছিলেন বেটিং ওয়েবসাইটে, তার ভাষ্যমতে, তার একটি বন্ধু মহল আছে, যারা সব ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বেটিং সাইটগুলোতে জুয়ায় মেতে ওঠেন, কখনো কখনো লাভ হলেও বেশির ভাগ সময়ই লোকসান গুনতে হয় তাদের, তবে লাভের আশায় গত দুই বছরে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান গুনেছেন এই যুবক।

নারায়ণগঞ্জ সদরের ফতল্লার মাসদাইর, ইসদাইর, গাবতলী, দাপা, লালপুর, রেল স্টেশনসহ প্রায় দেশের সব গ্রাম-গঞ্জে এখন গজিয়ে উঠেছে চায়ের দোকানে ক্রিকেট জুয়ার আসর, প্রতিটি ক্রিকেট ম্যাচকে ঘিরেই জমে ওঠে এই জুয়া, এর সঙ্গে জড়িত একদল জুয়াড়ি, চায়ের দোকানি এবং অনলাইনে বেটিংয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের এজেন্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চায়ের দোকানে একদল মানুষ বসে টেলিভিশনে খেলা দেখছেন এবং পাশে বসা ব্যক্তিদের সঙ্গে জুয়া খেলছেন, দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে খেলা দেখছেন, বাস্তবতাও তাই, কারণ সাধারণত ক্রিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সব ক্রিকেট দল ও খেলোয়াড় সম্পর্কে বিস্তর তথ্য রাখেন, তবে এই জুয়াড়িরা পেশাদারদের চেয়েও বেশি তথ্য রাখেন, নবাগত ক্রিকেটারদের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বাইশ গজে আছেন এমন শত শত ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার যেন মুখস্ত তাদের, যদিও যারা এই জুয়া খেলছেন তাদের একটি বড় অংশই রাজমিস্ত্রী, রিকশা চালক, ভ্যানগাড়ি চালক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পাঠাও-উবার চালক, ছোট কর্মচারীসহ দিন মজুর শ্রেণির মানুষ।

খেলার প্রতি ওভারে এসব এলাকার চায়ের দোকানে অনেক টাকার বাজি হয়, আবার কোন কোন এলাকায় দোকানে বসে জুয়া খেলার বিষয়ে শর্তও আছে দোকানিদের, বিজয়ী ব্যক্তিকে লাভের ১০ থেকে ২০ শতাংশ দিতে হবে দোকানদারকে, আবার কোনো কোনো দোকানে দোকানি নিজেই জুয়াড়ি, দোকানে থাকা ব্যক্তিরা বল প্রতি, ওভার, দল, খেলোয়াড়, রান সব বিষয়েই জুয়া চলে, এমনকি এক ওভারে কয়টি ডট বল হবে এ বিষয় নিয়েও চলে তুমুল জুয়া, আবার মুখোমুখি বসে জুয়া খেলার পাশাপাশি দোকানে বসেই অনেকে বাজি ধরেন অনলাইনে, বেটিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চলে মোটা অঙ্কের লেনদেন, মোবাইল ফোনে ভিপিএন চালু করে এই জুয়ায় মেতে ওঠেন জুয়ারিরা, বেট৩৬৫, ওয়ানএক্স বেটসহ বিভিন্ন নামি ও বেনামি ওয়েবসাইটে চলে ক্রিকেট বেটিং, যদিও বাংলাদেশে এর কোনো বৈধতা নেই।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি ওয়েবসাইট এক বা একাধিক এডমিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তারাই জুয়া পরিচালনা করেন, এসব ওয়েবসাইটে জুয়া খেলতে প্রথমে একটি আইডি তৈরি করতে হয়, এক্ষেত্রে নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে আইডি খুলতে হয়, পরবর্তী ধাপে টাকা পাঠিয়ে কয়েন কিনতে হয়, ওয়েবসাইটগুলোতে এক বা একাধিক বিকাশ, রকেট ও নগদ নাম্বার দেওয়া রয়েছে, যেখানে টাকা পাঠালে টাকার সমপরিমাণ কয়েন দেওয়া হয়, এরপর রেজিস্ট্রেশনকারী সে কয়েন দিয়ে প্রতি খেলায় সর্বনিম্ন ২০ কয়েন, সর্বোচ্চ যেকোনো পরিমাণ বেট বা বাজি ধরতে পারে, বাজি ধরার পর জয়ী হলে বিজয়ীর অ্যাকাউন্টে কয়েন জমা হয়। পাঁচশ কয়েন জমা হলে তা উইথড্র অপশনের মাধ্যমে তুলতে পারবেন জুয়াড়িরা, এক্ষেত্রে এডমিনের কাছে রিকোয়েস্ট করে বিকাশ, রকেট বা নগদ নাম্বার দেয়ার ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে টাকা পাঠিয়ে দেয় ওয়েবসাইট এডমিনরা।

ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিলেও জুয়াড়িদের জমা রাখা টাকার নিশ্চয়তা দেয় অনেক ওয়েবসাইট, নতুন ডোমেইন নিয়ে ফিরে এসে জুয়াড়িদের জমা থাকা কয়েন ফেরত দিচ্ছে তারা, জুয়াড়িরা বেটিংয়ের জন্য জমা বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া ওয়েবসাইটের সংখ্যাও কম নয়।

জানা গেছে, বেটিং ওয়েবসাইট তৈরিতে পেশাদার ওয়েব ডেভলপারসদের মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে, আর ডোমেইন বন্ধ করে দেওয়া হলে ওয়েবসাইটের সঙ্গে নতুন ডোমেইন যুক্ত করতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট, আর প্রতিটি ডোমেইনের দাম এক হাজার টাকা।

তবে সাধারণ মানুষের এই আবেগকে পুঁজি করে সামাজিক পর্যায়ে এখন চলছে ক্রিকেট নিয়ে বাজির খেলা- জুয়া, এর পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে লাখ লাখ টাকা পর্যন্ত গড়ায়, বিপিএল, আইপিএল, সিপিএলসহ ২০ ওভারের খেলাগুলোতে জুয়ার উন্মাদনা সবচেয়ে বেশি, জুয়া চলে হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে।

যেখানে একসাথে অনেকের খেলা দেখার সুযোগ আছে চায়ের দোকান, সেলুন ও লন্ড্রিসহ উন্মুক্ত স্থানে, মাঠের খেলাকে নিয়ে আসা হচ্ছে জুয়ার টেবিলে, আর জয়-পরাজয় কখনো কখনো সংঘর্ষে গড়ায়।

পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জুয়ার প্রভাব, এই ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করেছেন অপরাধ বিজ্ঞানীরা, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাজি ধরার প্রবণতা চলতে থাকলে সামাজিক অবক্ষয় ছাড়াও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুব সমাজ।কারন আমাদের তরুণ সমাজ দেশের জন্য সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত্, তাই, যুগোপযোগী আইন তৈরির পাশাপাশি, সমাজে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।

 

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!