মো. মনির হোসেন: নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, পদত্যাগের ঘটনা ও ঘটেছে, এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা গেছে কে লাভবান হয়েছে আওয়ামীলীগ নাকি বিএনপি, দীর্ঘদিন একটানা ক্ষমতায় থেকে দলীয় প্রতিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে দলের কেন্দ্রের সাথে একেবারে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের একটা মসৃণ পথ তৈরি করার সুযোগ ছিল কিন্তু সেটা না করে সারা বাংলাদেশে এই নির্বাচন দিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করা হয়েছে, দলের ত্যাগীদের রেখে ভাড়াটিয়া ও বসন্তের কোকিল এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যার কারণে কোথাও কোথাও তৃণমূলে দল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। প্রতীক ছিল নৌকা কিন্তু সারা বাংলাদেশে নৌকা প্রতীকের যেসব প্রার্থীরা ছিলেন তাদের অন্তরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল কিনা, তারা আওয়ামী লীগের কর্মী ছিল কিনা, তাদের থেকে দল কতটুকু লাভবান হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভবিষ্যতে দলের দুঃসময়ে তারা কতটা পাশে থাকবে সেটা একমাত্র সময়ই বলে দেবে।
তবে তৃনমূল জানান, সারা দেশে এসব নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ সাধারণ মানুষের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে প্রার্থীদের কাছে, নেতাদের অনুকম্পা পেতে মনোনয়নের জন্য সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসাকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি, এটা গণতন্ত্রের জন্য যেমন হুমকি তেমনি দলের জন্যও এক অশনী সংকেত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
তবে বিএনপি নেতারা মনে করছে তারা চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নিয়ে লাভবান হয়েছে, বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, এই নির্বাচন থেকে নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা আরও বেশি উন্মোচিত হয়েছে, তবে আমাদের দলের কর্মীরা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন এবং তিক্ত অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল পর্যায়ে আরও দুর্বল হয়ে গেছে, আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘এই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।’
যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ‘কৌশলী’ অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ভোটের মাঠে আছে দলটি, এসব নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রভাবে নেতারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ বা বহিষ্কার করা হবে না, কেন্দ্রের এমন মনোভাব জানার পর আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), পৌরসভা ও উপজেলার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যদিও নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। দলটির একটি অংশ মনে করেন, শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা, হয়রানি, জেল-জুলুম, সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করার কোনো মানে নেই।
বিএনপির একা দায়িত্বশীল নেতা জানান, ‘আমার কাছে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে অর্থহীন মনে হয়। মানুষ জানে, যদি প্রার্থী ‘নৌকা’ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে, তাহলে তিনি জিতবেন। তাহলে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে লাভ কি?’
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজির রয়েছে। কিন্তু সেসব দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমপর্যায়ের নয়। দলীয় আনুগত্য, আদর্শিক ঐক্য, দেশাত্ববোধ,পরমত ও পরনেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা মনোভাবের মারাত্মক অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। তবে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হবে, এ বিষয়টি মাথায় রেখেই স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে, একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের সাংঘর্ষিক অবস্থা ও নিজেদের দলের মধ্যে দলাদলির অবসান ঘটিয়ে দলকে সুসংগঠিত করা প্রয়োজন, স্থানীয় রাজনীতি যদি সুসংগঠিত না হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আর এ কথা মাথায় রেখেই যত দ্রুত সম্ভব দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন........