নারায়ণগঞ্জসোমবার , ২৫ মার্চ ২০১৯
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

স্বাধীনতা ও আমাদের ইতিহাস

Alokito Narayanganj24
মার্চ ২৫, ২০১৯ ৮:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কামাল সিদ্দিকী : ‘কি দেখার কথা কি দেখছি/ কি শোনার কি শুনছি/ কি ভাবার কথা কি ভাবছি/ কি বলার কথা কি বলছি/ ত্রিশ বছর পরেও আমি/ স্বাধীনতাটাকে খূঁজছি।’ কন্ঠশিল্পী হায়দারের এ গানের কলিগুলোর মাঝে স্বাধীনতার স্বপ্নগুলো যে আজো স্বপ্ন হয়েই রয়েছে তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। স্বাধীনতা একটি শব্দ। এ শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে একজন ব্যক্তি সমষ্টি ও একটি জাতির স্বকীয়তা। আসলে যিনি যে ভাবেই স্বাধীনতাকে সংজ্ঞায়িত করুন না কেন স্বাধীনতা মূলত স্বকীয়তা অর্জন ছাড়া আর কিছুই না। একজন অবুঝ শিশূও স্বাধীনভাবে চলতে চায়। অনেক চেষ্টার পর উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। তার সেই মুহূর্তে বিজয়ের হাসি শুধু উপলব্ধিই করা যায়; ব্যাখ্যা করা যায় না।

স্বাধীনতা আসলে স্বকীয়তা অর্জনের একটি স্বপ্ন। যে স্বপ্নের অনেক ডাল-পালা, পত্র-পল্লবে বিকশিত থাকে। কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ নামক কবিতাটিতে স্বাধীনতার স্বপ্নগুলো বাঙময় হয়ে আছে। মানুষ যখন অনেক সাধনার পর এক চিলতে জমি ক্রয় করতে সক্ষম হয়, তখন এ জমিটুকু নিয়ে তার সুন্দর একটি বাড়ি করার স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সে একটি পরিকল্পনা করে। মনের মাধুুরী মিশিয়ে সে একটি ছকে সুন্দর ডিজাইন প্রনয়ণ করে থাকে। সেখানে ড্রুয়িং রুম-কোরিডোর-লেন, ফুলের বাগান কোন কিছুই বাদ পড়ে না। কিন্তু প্রকৃত বাড়ি তৈরি করার পর যদি কোন কারণে বাড়িটি তার স্বপ্নের অনুরূপ না হয় তবে বাড়ির মালিকের দুঃখের অন্ত থাকে না। আমাদের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী হায়দারের গানের কথাগুলো যেন তার বহিঃপ্রকাশ।

আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রাক্কালে একটি স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ আমাদের অর্জিত হলো। কিন্তু, স্বাধীনতার সকল স্বপ্ন কী আজো বাস্তবায়িত হতে পেরেছে? এ প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদের প্রতিনিয়ত হতে হয়। কবি শামসুর রাহমান বলেছেন, ‘স্বাধীনতা আমার বাগানের ঘর? কোকিলের গান/ বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা/ যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।’ হ্যাঁ, আমার কবিতার খাতায় আমি যেমন ইচ্ছে তেমন লেখার স্বাধীনতা রাখি। কাটা-কাটি, সংশোধন পরিমার্জন পরিবর্ধন, এমনকি ওভার রাইটিং করার অধিকারও আমার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। সেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই। একটি স্বাধীন জাতিও যেন ব্যক্তির কবিতার খাতার ন্যায়। কেননা একট জাতি যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন স্বাভাবিকভাবেই সে জাতির নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার ঐতিহ্য নিয়ে চলার অধিকার লাভ করে থাকে। জাতীয় স্বকীয়তা বজায় রেখে সে দেশের সরকার ও জনগণ পারস্পরিক সহযোগিতা-সহমর্মিতা আর সংবেদনশীল মনোভাবপূর্ণ হয়ে দেশের সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য কাজ করে যায় ।

স্বাধীনতা অর্জনের মাইলফলকে সাময়িক সময়ের জন্য যে চির ধরে তা আইন-বিচার আর সমঝোতার মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছে ফাটল বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। আর এ ব্যবস্থাটি একটি দেশের শৃঙ্খলা তথা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত রক্ষা করার জন্য একান্ত আবশ্যক।

পাকিস্তানি শাসকচক্রের যাঁতাকল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের স্বাধীনতা কারো দয়া বা করুণার দান নয়। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পথে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা আজো আমাদের ক্লেদাক্ত করছে। একটি জাতীয় মতৈক্যের অভাব আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক মেরুকরণের সিদ্ধান্তহীনতা জাতিকে বিভক্ত করছে। যার ফলে অর্থনৈতিক মুক্তি সুদূর পরাহত। একটি জাতি বা দেশ কখন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে? যখন কোন জাতি কোন বিশেষ শাসকগোষ্ঠি-শ্রেণি বা ভিন্ন জাতির দ্বারা বৈষম্যের শিকার হয়; সাম্য-ভ্রাতৃত্বের জয়গান যখন ভূ-লুণ্ঠিত হয়, অর্থনৈতিক- সামাজিক-সংস্কৃতিগতভাবে বঞ্চিত হয়; বাক ও মত প্রকাশের অধিকার যখন বাধাগ্রস্থ হয়, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান যখন নিন্মগামী হতে থাকে, শোষণ-জুলুম-নির্যাতন যখন মাত্রা ছাড়া হয়। মানুষ তখন দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বাধীনতা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

স্বাধীনতায় মানুষের মনে আশারস্বপ্ন বাসা বাঁধে। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার আকুতি তাকে মৃত্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে শেখায়। তারপর যমদূতের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনে স্বপ্নের স্বাধীনতা।

আমাদের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটটি একটু বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান বিভক্তি ছিল মূলত ধর্মীয় বিভাজন। সঙ্গত কারণেই সাংস্কৃতিক বিভাজনও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানি শাসক শ্রেণি সমগ্র পাকিস্তানবাসীকে ইসলামীকরণ করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। যদিও তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম ছিল না। তাই তারা প্রথমেই পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ফলে বায়ান্নর রক্তক্ষরণের ধারাবাহিকতায় ঊনসত্তুরের গণউভ্যুত্থান ও সত্তুরের নির্বাচন, সর্বোপরি ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে। স্বাধীন বাংলাদেশও এ দু’টি মনস্তাত্ত্বিক ধারণা বিকশিত হতে থাকে। একটি ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রীয় চিন্তার দর্শনে রাজনীতি পরিচালনা করা।

অপরটি বাঙালি সংস্কৃতি লালনের কৃতসংকল্পে রাজনীতিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার বলয়ে রাখা। এ দু’টি দ্বন্দ্বের বিভাজনে বিভক্ত জাতি আজ স্বাধীনতার ফল লাভে ব্যর্থ। উদারণ স্বরূপ বলা যায় যে, এক শ্রেণির রাজনীতিবীদ ও বুদ্ধিজীবিরা এদেশের জাতীয় বীর হিসেবে মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ও ক্ষুদিরামকে প্রেরণার উৎস হিসেবে ইতিহাসের বরপুত্র মনে করে থাকেন। তাদের কথায়, লেখায় ও সংস্কৃতিতে তারই প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। আর বিপরীত ধারণার রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীগণ নেছার আলী তিতুমীর ও হাজ্বী শরীয়তুল্লাহকে এ জাতিসত্তার পূর্বসূরী তথা তাদের বীরত্ব গাঁথাকে ইতিহাসের আলোর ধারায় প্রচার করে মানসিক স্বস্তিবোধ করেন ।

এ দ্বিমুখী প্রচারণায় নব প্রজন্ম আলো-আঁধারের দোলা চালে সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছে। এভাবে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক, বাংলাদেশী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে বাকবিতণ্ডা, একুশে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে রেশারেশি ও বিতণ্ডা জাতি হিসেবে আমাদের মন ও মননশীলতায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এ বিভক্তি থেকে আমাদের জাতীয় নেতৃত্বও যথাযথ সম্মান হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা আমাদের জাতীয় নেতাদের নানাভাবে বিতর্কে জড়িয়ে ফেলেছি। এক এক সেশনে ভিন্ন ধ্যান-ধারণার সরকার এসে ইতিহাসকে নিজস্ব মানসিকতায় রচনা করছে। কোমলমতি শিক্ষানবীশরা কিছুদিন পরপর একই বিষয়ে ভিন্ন ইতিহাস পাঠ করে। নবপ্রণিত ইতিহাসকে সরকারের কারসাজি হিসেবে উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীদের নিজের মত করে ব্যাখ্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলোর প্রচারণার সঙ্গে গৃহকর্তা-কর্তির ইতিহাস জ্ঞানের পার্থক্য হেতু শিশুমনে আমাদের জাতীয় ইতিহাস অশুভ লক্ষণ ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ লক্ষ্যকে বাদ দিয়ে উপলক্ষ্য নিয়ে রাজনীতিতে ব্যস্ত।

তারপরও বলতে বাধ্য আমাদের স্বাধীনতা আমাদের গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্র দিয়েছে। প্রয়োজন শুধু মানসিকতা পরিবর্তন। দ্বন্দ্ব নয়-ঐক্য, বিভাজন নয়-সাম্য, হিংসা নয়-প্রেম, শত্রুতা নয়-মিত্রতাই হতে পারে আমাদের গণতন্ত্র চর্চার মূলমন্ত্র। আমার মতামতই শেষ কথা নয়; অন্যের মতও শ্রেষ্ঠতর হতে পারে। আমার পথই একমাত্র পথ নয়; আরো সুগম পথ থাকতে পারে। এ ধ্যান ধারণার রাজনীতিই পারে আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে। আসলে গণতন্ত্র বলতে কোন কঠিন সংজ্ঞার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। শুধু সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারার অধিকারের নামই হলো গণতন্ত্র বা আমার স্বাধীনতা। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এতটুকু চাওয়া, আমরা চাইতেই পারি। স্বাধীনতা বলতে যা ইচ্ছা তা করা বোঝায় না, অপরের ক্ষতি সাধন না করে নিজের ইচ্ছে মত কাজ করে যাওযার নামই হলো স্বাধীনতা। কবির ভাষায় বলতে চাই স্বাধীনতা আমার পাতার কুটির মমতায় ভরা ঘর/স্বাধীনতা আমার সুখ-স্বপ্ন নেই ভেদাভেদ আপন পর।

পরিশেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা দিয়ে শেষ করছি-
‘‘আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলে পঁচা অতীত
গৃহগুহা ছাড়ি খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত,
সৃজিব জগৎ বিচিত্রতর বীর্যবান
তাজা জীবন্ত সে নব সৃষ্টি শ্রম মহান।”

লেখক- কবি ও কলামিস্ট কামাল সিদ্দিকী

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!