আলোকিত নারায়ণগঞ্জ : দুবাই ড্যান্স বারে নারী পাচার চক্রের আরও আটজন আটক, দুই তরুণী উদ্ধার মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ড্যান্স বারে সুন্দরী তরুণীদের পাচার কাজে জড়িত আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের এক নারীসহ আরও আটকজনকে আটক করেছে র্যাব-১১ এর একটি দল।
আটকরা হলেন, পাচারের জন্য তরুণী সংগ্রাহক এজেন্ট নোয়াখালি জেলার শ্যামবাগের মো. হৃদয় আহম্মেদ ওরফে কুদ্দুস (৩৫), চাঁদপুরের মতলব থানার শিল্পি আক্তার (২৭), পটুয়াখালির ঝাউফল এলাকার মো. মুসা ওরফে জীবন (২৮), মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকার রিজভি হোসেন ওরফে অপু (২৭), চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মো. শিপন (২২), মাদারীপুর কালকিনি এলাকার মো. স্বপন হোসেন (২২), চাঁদপুর হাজিগঞ্জের মো. মামুন (২৪) এবং লক্ষিপুর চন্দ্রগঞ্জের মো. শাহাবুদ্দিন (৩৭)। তিনি ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক।
২৬ জানুয়ারি ঢাকার কেরানিগঞ্জের কামারাঙ্গিও চর ও মুগদা এলাকা থেকে তাদেরকে আটকের সময় তাদের কাছ থেকে পাচারের জন্য সংগ্রহ করা দুই তরুণীকে উদ্ধারসহ ৩৯টি পাসপোর্ট, ৬৬টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ১৮টি বিমানের টিকেটের ফটোকপি, ৩৬টি ভিসার ফটোকপি, ১টি কম্পিউটার এবং ১৯ টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে সাংবদিক সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব জানিয়েছে, এই চক্রের সাথে বিপুল সংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যান্স বারের মালিক, ট্রাভেল এজেন্সি, ও অসাধু ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে। এই নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবার, পোশাক শিল্প এবং ব্রোকেন ফ্যামেলির সুন্দরী তরুণীদের প্রাথমিক ভাবে টার্গেট করে থাকে। তাদের প্রাথমিক টার্গেটের পর তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিককে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্স বারের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি সরাসরি ঢাকায় অথবা আশপাশের কোনো রেস্টুরেন্টে অথবা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক মাইক্রোবাসে স্বাক্ষাৎ করে।
র্যাব আরও জানায়, চূড়ান্ত নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট নিজস্ব দালালদের মাধ্য প্রস্তুত করে থাকে। এবং ট্রাভেল এজেন্ট মালিকদের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তরুণীদের মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। বিদেশে পাচার করা তরুণীরা এয়াপোর্টে নামার সাথে সাথেই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের গ্রহণ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখতো। প্রাথমিক অবস্থায় এরা অসামাজিক কাজ করতে রাজি না হলে তাদেরকে নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করার মাধ্যমে দিনের পর দিন তাদের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হতো। ওই তরুণীদের মধ্যে কাউকে যদি কোনো খদ্দের পছন্দ করতেন তাহলে বারের মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে।
এর আগে ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো মোড়ের শাহ চন্দ্রপুরী রেস্টুরেন্ট থেকে এই চক্রের অনিক হোসেন (৩১), মো. মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০), মো. আক্তার হোসেন (৪০), মো. আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (৩৭), আ. হান্নান (৫২) এবং মো. আকাশ (২৯) নামের ৬ জনকে আটক করেছিলো র্যাব-১১। এসময় বিদেশ পাচারের জন্য জড়ো করা ৪ তরুণীকে উদ্ধারসহ ৭০ টি পাসপোর্ট, ২শ টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০ টি বিমানের টিকেট, ৫০ টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১ টি সিপিইউ, ১টি মনিটর এবং একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস ও নগদ এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছিলো।
এ ধারাবাহিকতায় এবং আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুসারে ২৬ জানুয়ারি অভিযান চালায় র্যাব। সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে কেবল নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫ থেকে ৭শ সুন্দরী তরুণীকে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব সূত্র। তরুণীরা এয়াপোর্টে নামার সাথে সাথে পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের গ্রহণ করে হোটেলে নিয়ে গিয়ে গৃহবন্দি করে রাখতো। তারা নিজ ইচ্ছেয় বাইরে যেতে পারতো না।
প্রাথমিক অবস্থায় এরা অসামাজিক কাজ করতে রাজি না হলে তাদেরকে নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করার মাধ্যমে দিনের পর দিন তাদের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হতো। বাধ্য করা হতো যৌন কাজে। সারা দেশেই এই চক্রের অসংখ্য সদস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা ড্যান্স ক্লাবের প্রশিক্ষক ও ছাত্রদের মাধ্যমে সুন্দরী তুরণীদের ফেলতো ফাঁদে। বিদেশ যাওয়ার জন্য রাজি করিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্র তথা বিদেশে অবস্থানরত ড্যান্স বার মালিকের কাছ থেকে মাথা পিছু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে কমিশন পেত স্থানীয় ড্যান্স ক্লাবের প্রশিক্ষক বা ছাত্ররা।
আপনার মতামত লিখুন........