নারায়ণগঞ্জবৃহস্পতিবার , ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

নারায়ণগঞ্জে পাড়া-মহল্লায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা

Alokito Narayanganj24
জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ ১০:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মো. মনির হোসেন: নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা। ধারালো অস্ত্র হাতে দল বেঁধে চলা, পথিমধ্যে প্রকাশ্যে কাউকে কুপিয়ে জখম করা তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তেমন সরব দেখা যায় না।

সন্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছ । গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে ফতুল্লার মাসদাইর বারৈইভোগ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় গ্রুপের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। তবে আহতদের নাম জানা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, ফতুল্লার মাসদাইর ঘোষেরবাগ এলাকার ফেরদৌস আর খানকার মোড় এলাকার রমু গ্রুপের মধ্যে মাদক ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের উভয় গ্রুপের মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক কিশোর রয়েছে। কয়েকদিন যাবত দুই গ্রুপের মধ্যে এলাকার সীমানা ভাগাভাগি নিয়ে উত্তেজনা চলছে। গত সোমবার রাতে এনিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বারৈইভোগ বাজারে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে আবারো দুই গ্রুপের মধ্যে রামদা, ছুরি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় গ্রুপের অন্তত ৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে রমু গ্রুপের অনিকের (২০) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিলন (৩৫) নামে এক সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং লিডারকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল দুপুরে নাসিক’র সিদ্ধিরগঞ্জের ৪নং ওয়ার্ডর আটি গ্রামের নুরুল মেম্বারের বাড়ির মোড়ে। নিহত মিলন ওই এলাকার কাশেম ওরফে চোরা কাশেমের ছেলে। সে থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত সর্দার সাহেব আলীর অন্যতম সহযোগী। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতদের সঙ্গে থাকা একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিলনের নেতৃত্বে ডাকাত সর্দার সাহেব আলীর ভাই রবিউল, পিয়াস ও জনিসহ ২০-২৫ জনের কিশোর গ্যাং চক্র দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুপুরের দিকে এলাকায় মহড়া দেয়। এ সময় একটি মোটরসাইকেলযোগে নিহত মিলন ও জনিসহ তিনজন ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান (দুবাই শাজাহান)কে দু’টি রামদা নিয়ে হামলা করার চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। তখন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকার লোকজনকে সংঘবদ্ধ করে তাদের ধাওয়া দেয়া হয়। এ সময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও দলনেতা মিলনকে ধরে গণপিটুনি দেয় লোকজন।

তবে ইদানীং পত্রপত্রিকায় ‘কিশোর গ্যাং’ বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু খবর বেরোচ্ছেই। সমস্যাটি যে করোনাভাইরাসের মতোই মহামারি হতে চলেছে, খবরর সংখ্যা বেড়ে চলা থেকেই সেটি স্পষ্ট।

এলাকাভিত্তিক গ্যাং কালচারের অন্যতম স্টাইল হচ্ছে দল বেঁধে মোরসাইকেল মহড়া। মাথায় হেলমেট ছাড়াই এক মোটরসাইকেলে ৩ জন উঠে ৮/১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে তীব্র শব্দে এরা দাপিয়ে বেড়ায় নিজ নিজ এলাকার অলি-গলি। নতুন কোনো গ্যাং যেন ওই এলাকায় মাথা তুলতে না পারে, এ যেন তারই মহড়া।

তবে সাধারণ মানুষের মতে, ‘কিশোর গ্যাং’ বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম, সম্প্রতি সারা দেশব্যাপী এদের অপতৎপরতা হু হু করে বাড়ছে, আধুনিক বিশ্বের অসংগঠত সমাজব্যবস্থায় দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের নেতিবাচক ফল হলো কিশোর অপরাধ। পরিবার কাঠামোর দ্রুত পরিবর্তন, শহর ও বস্তির ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ এবং সমাজজীবনের নৈরাজ্য ও হতাশা কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ। পাশাপাশি অপসংস্কৃতির বাঁধভাঙা জোয়ারও এজন্য অনেকাংশে দায়ী।

আসলে কিশোর অপরাধের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে পারিবারিক অসচেতনতা। শিল্পোন্নত ও পুঁজিবাদী সমাজের মতো বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ কাঠামোতেও কিশোর অপরাধের ভয়াবহতা বাড়ছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে কিশোর অপরাধের প্রবণতা বাড়লেও সাম্প্রতিককালে এই প্রবণতা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়টি একা কিছু করতে পারবে না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। বয়ঃসন্ধিকালের এই কিশোরদের সবাই মিলে ঠিকমতো গাইড করতে হবে। তা না হলে এই কিশোর গ্যাং কালচার রোধ করা কঠিন। যদিও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ প্রতিরোধে র্যাব লিফলেট বিতরণ, বিলবোর্ড, স্টিকার স্থাপন, টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার ও বিভিন্ন প্রন্ট মিডিয়ায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এ ছাড়াও তাদের কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তাতে কি মূল সমস্যার সমাধান হবে?

কিশোরদের কেউ যখন বন্ধুর মাধ্যমে গ্যাংগুলোতে ঢুকছে এবং মাদক ও অস্ত্রের জোগান সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তখন অপরাধপ্রবণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়? কিশোর গ্যাংয়ের যারা অপরাধ করে, তারা ক্ষমতাবান। কিন্তু এই ক্ষমতার উৎস কোথায়? আমাদের মধ্যে দায়িত্ব এড়ানোর প্রবল ঝোঁক রয়েছে। কেউ দায় নিতে চান না! অথচ নিজেকেই যদি প্রশ্ন করা হয় একজন কিশোর যখন অপরাধী হয়ে ওঠে, তার জন্য কি শুধু সেই কিশোরই দায়ী? কী আসে উত্তর!

লেখকঃ কলামিস্ট, সাংবাদিক।

সাধারণ সম্পাদক ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!