আলোকিত নারায়ণগঞ্জ ২৪ ডট নেট : শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে দেশের বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পদস্থ চাকরিজীবীদের মোবাইলে হুমকি দিয়ে বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে চাঁদা আদায়কারী ‘দয়াল বাবা’ সহ প্রতারক চক্রের ৩ হোতা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।
আড়াইহাজার উপজেলার বান্টিবাজার এলাকা থেকে র্যাব-১১ তাদের আটক করেছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে সৈয়দ আকতার হোসেন লিটন (৪৫), মুকলেসুর রহমান ওরফে দয়াল বাবা (৫২) ও দুলাল ওরফে দুলাল পাগলা(৩২)।
বৃহস্পতিবার র্যাব-১১ এর আদমজী নগরের কার্যালয়ে গ্রেপ্তার তিনজনকে নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র ভুয়া মোবাইল সিম ব্যবহার করে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও উচ্চপদস্থ চাকরিজীবীদের শীর্ষ-সন্ত্রাসী পরিচয়ে মোবাইলে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আড়াইহাজার থানার জনৈক মমতাজ হাসান র্যাব-১১’র অধিনায়ক বরাবর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানান, একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে দেশের শীর্ষ-সন্ত্রাসী মিরপুরের শাহাদাত পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে।
প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও অনুসন্ধানে নেমে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় র্যাব-১১। ওই পরিচয়ে একই ব্যক্তি একাধিক সিম ব্যবহার করে দেশের বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পদস্থ চাকরিজীবীদের মোবাইলে হুমকি দিয়ে চাঁদার দাবি করেছে।
অনেকে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে বিকাশে চাঁদা দিয়েছে। অনেকে হুমকিতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি ও করেছে।
বুধবার রাতে গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী মহাসড়কের আড়াইহাজার থানার বান্টিবাজার থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাজ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের মূল হোতা সৈয়দ আকতার হোসেন লিটন। তার বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার আমগ্রামে।
প্রতারণাই তার মূল পেশা আর মাজার ভক্তি তার নেশা। প্রায় এক যুগ আগে গাজীপুরের কোনাবাড়ির এক মাজারে ফকির মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয়। লিটন ভক্তি করে ফকির মোখলেসুর রহমানকে ‘দয়াল বাবা’ উপাধি দেয়। দয়াল বাবার মুরীদ হিসেবে দুলাল পাগলার সঙ্গে লিটনের পরিচয় হয়। দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লিটন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
জিনের বাদশা হয়ে প্রতারণা করার অপরাধে একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিল।
প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা নিয়মিত গুরুদক্ষিণা হিসেবে দয়াল বাবাও পেত। সরকার মোবাইল সিম নিবন্ধনের আওতায় আনলে লিটনের প্রতারণা কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। প্রায় ৩মাস পূর্বে দয়াল বাবার নির্দেশে দুলাল পাগলা গাজীপুর চৌরাস্তার আজিজ নামের এক ভিক্ষুকের জাতীয় পরিচয় পত্র ও ফিংগার প্রিন্ট ব্যবহার করে ০৪টি সিম তুলে লিটনকে দেয়। এই সিমগুলো দিয়ে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। পরবর্তীতে এই সিম ও বিকাশ নম্বর ব্যবহারের মাধ্যমে হুমকি ও প্রতারণা করে এই চক্র বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।
র্যাব-১১ আদমজীনগর, নারায়ণগঞ্জ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামশের উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন........