আলোকিত নারায়ণগঞ্জ : ছেলে ও ছেলের বউয়ের অবহেলা ও নির্যাতনে বাঁচার জন্য ভিক্ষা ভিত্তিতে নাম লিখালেন এক বৃদ্ধা মা। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ উপজেলায় দুপুর সাড়ে ১২টায় এক বৃদ্ধা মায়ের চিৎকার শুনে অনেক মানুষের সমাগম হয়।
সেখানে গিয়ে জানা যায়, ৩ মিনিট আগে দুই জন মহিলা বয়ষ্কভাতা নিতে এসে উপজেলার এখানে বৃদ্ধার সামনে বসে। এক সময় বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করে তার কাছে কোন ভাংতি আছে কিনা। বৃদ্ধা হ্যা বললে মহিলা দুইজন বৃদ্ধার ব্যাগ নিয়ে টাকা গুনার কথা বলে চলে যায়। তাই বৃদ্ধা কান্না করছে। বৃদ্ধা হেটে কেনো মহিলা দুই জনকে ধরলো না প্রশ্ন করলে উপজেলার আশে পাশের কিছু লোক থেকে জানা যায় বৃদ্ধা হাটা চলা করতে পারে না এবং বিগত ১৫ দিন ধরে বৃদ্ধা উপজেলার বারিন্দায় থাকছে। তার ছেলে খালেক (৪০) ও ছেলের বউ আমেনা (৩০) বাসা থেকে মেরে বের করে দিয়েছে। বাসা থেকে বের করে দেবার মূল কারন হলো বৃদ্ধা প্রতিদিন ৪০০ টাকা ভিক্ষা করে নিয়ে দেয় না কেনো। ছেলে খালেক ঢাকা টেক্সটাইলের পাশে অবস্থিত আজিজ ডাইংয়ে কাজ করে স্বল্প বেতনে। নিজের সংসার খরচ করে বৃদ্ধার ওষুধ পানির খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই বৃদ্ধাকে ভিক্ষা ভিত্তিতে নামতে বাধ্য করে ছেলে ও ছেলের বউ। ১৫ দিন আগে বৃদ্ধার হাতে ও পায়ে দা দিয়ে আঘাত করে আহত করে বাসা থেকে বের করে দেয় বৃদ্ধারর ছেলের বউ। সেইদিন থেকেই বৃদ্ধা এক পা ও এক হাত নড়াচড়া করতে পারে না এবং থাকার স্থান হয় উপজেলার বারিন্দায়।
বৃদ্ধার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, আমিই প্রথম থেকে বৃদ্ধাকে সেবা যত্ন করে আসছি। প্রথম যেদিন বৃদ্ধা উপজেলায় আসে তখন বৃদ্ধার শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন ছিলো। বৃদ্ধার ডান হাত-পা ও হাত পায়ের আঙুল কাটা ছিলো। আমি ওষুধ পানি দিয়ে বৃদ্ধাকে সুস্থ করে তুলার চেষ্টা করছি। প্রথম যেদিন বৃদ্ধা উপজেলায় আসে সেদিন উপজেলার দাড়োয়ান বৃদ্ধার কাছে থেকে ৭০০ টাকা নেয় এবং তারপর ঝাড়ুদার মহিলাও ৫০০টাকা নিয়েছে বৃদ্ধা আমায় বলেছে। উপজেলা থেকে কয়েকবার বৃদ্ধাকে তার বাসায় ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে যেতে বললে তারা নিতে রাজি হয় না। আমার মা নেই তাই তাকে মায়ের মত দেখতাম তার থাকার জন্য মশারি ও বিছানার ব্যবস্থা করে দেই এবং তার যত্ন নেই। কিন্তু মানুষভাবে আমি নাকি বৃদ্ধার টাকার জন্য তাকে সেবা যত্ন করছি।
বৃদ্ধার সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, তার নাম রাজিয়া। আনুমানিক ৮০/৮২ বছর হবে বৃদ্ধার। বৃদ্ধা তার ছেলেকে নিয়ে অনেকদিন যাবত নারায়ণগঞ্জে আছে। বৃদ্ধা বরিশাল থেকে এসেছে। বৃদ্ধা কিছু স্মৃতিভ্রষ্ট।
অসুস্থ বৃদ্ধা গত ১৫ দিন যাবৎ উপজেলায় থাকছে কিন্তু উপজেলা কতৃপক্ষ বা প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কোন ছেলে ও ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে আইনীও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেনো? পথচারীদের প্রশ্ন।
আপনার মতামত লিখুন........