আলোকিত নারায়ণগঞ্জ:ঢাকার ফকিরাপুল ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া জন্ম সনদ ও পার্সপোট তৈরির অভিযোগে জালিয়াতি চক্রের দুজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন ১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল। র্যাব ১১, ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশাল কম্পানির ভারপ্রাপ্ত কম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী পরিচালিত অভিযানে আটককৃতরা হলো মো. হেদায়েতুর রহমান (৪৫) ও মো. ইব্রাহীম (৩০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬০টি ভুয়া জন্ম সনদপত্র, ১০টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ৭টি পাসপোর্ট ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ১টি মনিটর, ১টি সিপিইউ এবং ১টি স্ক্যানার জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে ও গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটককৃত হেদায়েতুর রহমান উক্ত জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা। আটককৃত ইব্রাহীম ফকিরাপুলে একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানের কর্মচারী এবং সে উক্ত জালিয়াতির চক্রের সহযোগী। গ্রেপ্তারকৃত হেদায়েতুর রহমানের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন কাকারা গ্রামে। সে দীর্ঘ ১ যুগ ধরে ঢাকার ফরিকাপুল এলাকায় বসবাস করে আসছে। শুরুতে পাসপোর্ট অফিসের দালালি ও ভিসা প্রসেসিং এর কাজ করলেও পরবর্তীতে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলাতে হওয়ায় কক্সবাজার এলাকায় কয়েকজন পাসপোর্টের দালাল চক্রের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। কক্সবাজারে উক্ত পাসপোর্টের দালাল চক্রগুলো মূলত মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিত। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরিতে সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে উক্ত এলাকার জালিয়াতি চক্রগুলো হেদায়েতুর রহমানের মাধ্যমে ঢাকায় পাসপোর্ট তৈরি করত। ঢাকায় হেদায়েতুর রহমানে ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবে কাজ করত তার ভাতিজা সুমন। হেদায়েত কক্সবাজার ও অন্যান্য এলাকায় দালাল চক্রের চাহিদা মোতাবেক ভাতিজা সুমনের মাধ্যমে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার আজিম নামের এক ব্যক্তির নিকট হতে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করত। প্রতিটি অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের জন্য ১৩০০ টাকা দিত। উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ নারায়ণগঞ্জ জেলার পাসপোর্ট অফিসের পাশে র্যাব ২ এর অভিযানে আজিম গ্রেপ্তার হয়। র্যাব ২ এর দায়েরকৃত মামলায় বর্তমানে আজিম জেলহাজতে রয়েছে।
র্যাব ১১ এর অভিযানে উদ্ধারকৃত অধিকাংশ জন্ম নিবন্ধনে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষর রয়েছে এবং যাদের নামে উক্ত জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে তাদের অধিকাংশের স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায়। রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে যাচাই করে জানা যায় জালিয়াতি চক্র তাদের স্বাক্ষর ও সীল জাল করেছে। কিন্তু ইস্যুকৃত জাল জন্ম সনদে উল্লেখিত ১৭ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইটে যাচাই করে দেখা যায় উক্ত নম্বরের অনুকূলে উল্লেখিত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ মিল রয়েছে। উল্লেখ্য, উক্ত তথ্য ভাণ্ডারে কোনো ছবি থাকে না। পরবর্তীতে উক্ত জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করলে আবেদনকারীর উল্লেখিত তথ্য জন্ম নিবন্ধনের ডাটাবেসের সাথে মিল থাকলে তারা সহজেই পাসপোর্ট পেয়ে যেত। একইভাবে ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, বয়স পরিবর্তন করেও পাসপোর্ট করিয়ে নিত এই জালিয়াতি চক্র। কোনো ব্যক্তির নামে বিরূপ তথ্য থাকলে কিংবা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হলেও নতুন পাসপোর্ট করেও সহজে বিদেশ চলে যাওয়া যায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়।
অভিযানকালে আসামিদের নিকট হতে জব্দকৃত ও তাদের কম্পিউটারে রক্ষিত জন্ম সনদগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যাদের নামে জন্ম সনদগুলো তৈরি করা হয়েছে সেই সনদ গ্রহণকারী লোকগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা নন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও উদ্যোক্তা সদস্য, সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের জন্ম মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন কার্যালয়ের কর্মচারীদের যোগসাজশে জন্ম নিবন্ধন সনদ ন্যাশনাল সার্ভার হতে তৈরি করে সরবরাহ করত। এই জন্ম সনদ দিয়ে কয়েক শতাধিক পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। তাদের এই কাজে পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন অসাধু কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহকারীর যোগসাজশ রয়েছে বলেও জানা যায়। তাদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন........