আলোকিত নারায়ণগঞ্জ : ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ব্যর্থ হলেও ফতুল্লার ভূইগড়ে পুলিশের পোশাক পড়ে গাড়ি ছিনতাই চেষ্টার মূলহোতা মশিউর রহমান পাপ্পুকে (৩৪) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সে গাড়ি মালিকের ভাগ্নে আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্ত্রীর দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই।
গত ৪ জানুয়ারি পুলিশের পোশাকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে একটি নোয়া গাড়ি থামায় চার যুবক। পরে গাড়ির কাগজপত্র দেখে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মালিক নোমানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। কিন্তু গাড়ি চালক দেলোয়ারের সন্দেহ হয় পুলিশের পোশাক পড়া ৪ জনকে নিয়ে। দ্রুত যাওয়ার পথে ভূইগড় এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যানের সাথে ধাক্কা লাগে গাড়িটির। এই সময় গাড়ি চালক চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে চার যুবকের তিনজন পালিয়ে যায়।
এ সময় শামীম নামের একজনকে মারধর করে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ এসে তিনটি খেলনা পিস্তল ও দুটি ওয়ারলেসসহ পুলিশের পোশাক পরা এক শামীমকে আটক করে। তার পড়নে ডিএমপির পোশাক ছিল। সে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের কারাগারে। সেই পলাতক ৩ যুবকের কাউকে দীর্ঘদিনেও আটক করতে পারেনি ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত পাপ্পু জানিয়েছে, তার স্ত্রীর দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই নোমানের গাড়িটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে সে। গাড়িটি ছিনতাইয়ের আগে তার লোকজন নোমানকে বেশ কয়েকদিন অনুসরণ করে। এজন্য সে পাঁচটি জিপিআরএস কেনে। তার সহযোগীরা নোমানের গাড়িতে একাধিকবার জিপিআরএস লাগিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারির চার্জ শেষ হওয়ায় সেগুলো দিয়ে ট্র্যাক করতে পারেনি। পরে নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই অনুসরণ করে গাড়িটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল।
তবে নারায়ণগঞ্জে গাড়ি ছিনতাই করতে এসে ধরা না খেলেও এবার ইংলিশ মিডিয়ামের এক ছাত্রসহ দুই তরুণকে অপহরণের ঘটনায় আটক হয় তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ পাপ্পু। সে সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ করে বেড়াতো। তার দলে রয়েছে ১০-১২ জন সদস্য। এদের সে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান ও চাঁদ হাউজিংয়ের তিনটি বাসায় রাখে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতো।
ডিবি পুলিশ তার সাত সহযোগীকে গ্রেফতার ও তাদের কাছ থেকে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ১টি প্রাইভেটকার, ৩টি মোটরসাইকেল, ম্যাগজিনসহ ১টি পিস্তল, ৫টি ডিএমপি’র ডিবি পুলিশের পোশাক (জ্যাকেট), ডিএমপি’র পুলিশ সার্জেন্টের র্যাঙ্কব্যাজসহ ১টি ইউনিফর্ম শার্ট এবং পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার ১টি শার্ট, ৭টি স্টিলের লাঠি, ৩টি কালো রঙের ছোট-বড় ওয়্যারলেস সেট, ৪টি পিস্তল-সদৃশ লাইটার, ৫টি সিরিঞ্জ, ২০টি ইনজেকশন, ১ সেট সেনাবাহিনীর পোশাক তৈরির থান কাপড়, ১৫টি বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল সেট (সিম সংযুক্ত) এবং অ্যাপল কোম্পানির ১টি আইপ্যাড উদ্ধার করা হয়।
পাপ্পু ও তার সাত সহযোগী গ্রেফতার সহযোগীরা হলো মাহমুদুর রহমান রাসেল ওরফে রচি (৩০), রশিদুজ্জামান ওরফে তুষার (৩২), শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি (৩২), ইমতিয়াজ আহমেদ (২৮), আরিফুল ইসলাম ওরফে নিশান (৩২), ফকর উদ্দিন (২৪) ও আব্দুল্লাহ আল নোমান (৩০)।
পাপ্পুর পারিবারিক ইতিহাস অবাক করার মতো। তার চার ভাইয়ের মধ্যে একজন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা। আরেক ভাই ঢাকায় ব্রিটিশ ল’ শেষ করে ব্যারিস্টারি পড়তে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যে। সবার ছোট ভাই সম্প্রতি বুয়েট থেকে পাস করেছেন। স্ত্রীও ব্যারিস্টারি পড়ছেন যুক্তরাজ্যে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি নিজেও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) পাস করেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চাকরিও করেছেন বড় কোম্পানিতে। কিন্তু, সব ছেড়ে এখন অপহরণ, ছিনতাই আর চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।
আপনার মতামত লিখুন........