নারায়ণগঞ্জবুধবার , ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

আমাদের ভাষা-সাহিত্য

Alokito Narayanganj24
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯ ৭:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কামাল সিদ্দিকী : বাংলা ভাষার হাজার বছরের ইতিহাস। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের আধুনিক রূপ পরিগ্রহণ করেছে। বাংলা এখন বিশ্ব সভার অলংকার। এ ভাষার গৌরবময় ইতিহাস এখন সমগ্র বিশ্বের অহংকারের প্রতীক। একুশ ফেব্রুয়ারী আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

কিন্তু বাংলাভাষা আজকের পর্যায়ে আসতে অনেক কাঠ- খড়ি পোড়াতে হয়েছে। বাংলাভাষা একসময় রাষ্ট্রভাষা ছিলো না, কারণ বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির শাসকবর্গ বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাকে শাসন করেছে। তাদের মাতৃভাষা বাংলা ছিলো না। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি সেন বংশর সর্ব শেষ রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করেছিলেন। তিনি ছিলেন তুর্কি সেনাপতি। সেই থেকে ইসলাম ধর্ম ও বৃহত্তর পারস্য সভ্যতার সংস্পর্শে আসে বাংলা। ১৩৩৮ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ বাংলার স্বাধীন সুলতানী প্রতিষ্ঠা করেন যা দু’শ বছর স্থায়ী হয়েছিল। তবে এ সকল সুলতানরা কেউই বাঙালী ছিলেন না। তাদের সূত্রে বাংলার রাজদরবারের ভাষা হয় ফার্সি যা ইংরেজদের ক্ষমতা দখলের পরও বেশ কিছুকাল বহাল ছিল।

পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গে ইসা খান, কেদার রায়- প্রতাপাদিত্য প্রমুখ ইতিহাস খ্যাত বার ভুঁইয়ার রাজত্ব ও প্রভাব বহাল ছিলো। তাঁরা প্রায় সবাই ভারতের বিভিন্ন অংশে মোগলদের হাতে পর্যুদস্তু পাঠান, রাজপুত বংশের সামন্ত শাসক ছিলেন ; বাঙালী ছিলেন না। ফলে বাংলা ভাষা তখনো রাষ্ট্রীয় ভাষায় মর্যাদা পায় নি।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সঙ্গত কারণেই এ দেশের মানুষ ভেবেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সংখ্যা ঘরিষ্ঠতার কারণেই রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পেতে পাবে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠি হয়তো ন্যায় পরায়ণতার ভিত্তিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবেন। কিন্তু না, খান-পাঞ্জাবী-বেলুচ শাসকম-লীও তাদের নিজস্ব ভাষা ঊর্দুকে (যা ছিলো তখন সংখ্যা লঘুর ভাষা) রাষ্ট্র ভাষা করার ঘোষনা দিলেন। না, প্রথমে কোন দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির নেতা নয়; একেবারে পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদা আযম জিন্নাহ সাহেবই তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকাতে দাঁড়িয়ে এ ঘোষণা দিলেন।

বাঙালীর হৃদপিণ্ডের আঘাত পড়লো। অথচ এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মুখ্য ভূমিক রেখেছিলেন বাঙালী নেতাগণ। বিশেষ করে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, মাওলানা আঃ হামিদ খান ভাষানী উল্লেখ যোগ্য ছিলেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলা ভাষা কিন্তু তখনো ফেলানী ভাষা ছিলো না। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজি, মীর মোর্শারফ হোসেন, কায়কোবাদসহ খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিকদের দ্বারা বাংলা তখন সমৃদ্ধশালী আভিজাত্যোর ভাষায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের নোভেল প্রাপ্তির পর বাংলা ভাষা বিশ্ব সাহিত্যের অংশে পরিণত হয়।

কাজী নজরুল ইসলাম তার কাব্য-সাহিত্যে আরবি, ফার্সি-উর্দু শব্দের অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলা ভাষাকে সকল ভাষার ধারক-বাহক হিসেবে গ্রহনযোগ্য হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। এমন একটি অনুপম সাহিত্যমাধুর্যপূর্ণ ভাষাকে পাকিস্তানি শাসকচক্র অপাংক্তেয় হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস কেন করেছিল তা বোধগম্য নয়। যাই হোক এদেশের ছাত্র জনতার সম্মিলিত প্রতিবাদ ও সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা তার প্রকৃত আসনটিতে অলংকৃত হতে পেরেছে।

পাকিস্তান পিরিয়ডে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা ও একুশে বই মেলা তার অনন্য সংযোজন। সর্বোপরি একুশে চেতনায় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা দেশের আবির্ভাব। স্বাধীনতার সংগে সংগে এ দেশের সাহিত্যের ক্ষেত্রেও নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো। সবচেয়ে বেশী লাভবান হলো ইসলামী সাহিত্য।

এদেশের শতকরা ৮০ জন নাগরিক মুসলমান যাদের ধর্ম ইসলাম। কোরআন-শরিয়া বিধান তথা ইসলামী আইনের প্রধান উৎস। হাদীস দ্বিতীয় উৎস। আবার রয়েছে ইজমা-কিয়াস। তাছাড়া আরো রয়েছে আরবি ফার্সি ভাষায় রচিত বিপুল পরিমাণে ইসলামী সাহিত্য। যা জানা একজন মুসলিম হিসেবে খুবই জরুরি। স্বাধীনতার পর ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবর রহমান সেই অভাবটুকু পূরণ করেছেন। এখন বাংলা ভাষায় মুসলিম সাহিত্য সমৃদ্ধ বলা যায়।

যে কোন ভাষার ক্ষেত্রে গ্রহণ-বর্জণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ষোড়ষ শতাদ্বীর সাহিত্যের ভাষা বলা যায় বর্তমানে অচল ও দূর্বুদ্ধ। কিন্তু ঐতিহ্য আর ইতিহাস লালনের স্বার্থে তা সম্পূর্ণ পরিত্যজ্য হউক তা কাম্য নয়। কিন্তু সেই অর্থে বর্তমান পাঠ্যসূচিতে প্রাচীন সাহিত্যের ছড়া-ছড়ির কারণ খুঁজে পাই না। অপর দিকে পাঠ্যসূচিতে অপরিপক্ক হাতের নিম্নমানের ছড়া-কবিতা ও গল্পের অন্তর্ভুক্তি আমাদের সাহিত্যের মানদন্ডকে প্রশ্ন সাপেক্ষ করে কিনা ভেবে দেখা দরকার। আমরা আমাদের দেশকে ভালবাসি। আমাদের মাতৃভাষার ব্যপক প্রসার ও প্রচার কামনা করি। কিন্তু আবেগ বিহ্বলতায় দেশ ও ভাষাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারি না।

লেখক- কবি ও কলামিস্ট কামাল সিদ্দিকী

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!