আলোকিত নারায়ণগঞ্জ : শাহনাজ আক্তার শিখা। ২৫ বছরের তরুণী। একটি ৩ বছরের ফুটফুটে ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামী প্রবাসি হওয়ায় মায়ের কাছেই থাকে শিখা। গেল রোজার ঈদের পর থেকে কেমন যেনো অস্বাভিক আচরণ করতে থাকে শিখা। যখন ভালো থাকে মাকে জানায় কোন কিছুই সে মনে রাখতে পারে না। সব কিছু কেমন ওলট পালট লাগে।
যখন অস্বাভাবিক হয়ে যায় শিখা তখন নিজেই নিজের পরিহিত জামাকাপড় টেনে ছিড়ে ফেলে। এমন অবস্থায় শিখাকে ডাক্তারের কাছে নেয় তার মা সুরাইয়া বেগম। ডাক্তারের চিকিৎসার পাশাপাশি শিখার মা তাকে একজন হুজুরের দ্বারাও চিকিৎসা করায় যদি কোন খারাপ আছর থেকে থাকে এই ভেবে। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছিলো না।
পরে শিখাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খোঁজ মিলে কবিরাজ ফারুক হোসেনের। শিখার মা সুরাইয়া বেগম মেয়েকে ভালো করার জন্য ১৫জুন (শনিবার) সরনাপন্য হয় ওই কবিরাজের কাছে। কবিরাজ ফারুক ও তার স্ত্রী জেসমিন দম্পতির সাথে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি হয় শিখাকে সাড়িয়ে তোলার জন্য। একসপ্তাহ চিকিৎসা চলবে। রবিবার (১৬জুন) সুরাইয়া বেগমের ঢাকার সাদ্দাম মার্কেটের বাড়িতে ওঠে কবিরাজ ফারুক ও তার স্ত্রী জেসমিন।
প্রাথমিক চিকিৎসায় কবিরাজ শিখার মাকে জানায় তার সাথে একটি খারাপ জি¦ন আছে। তাকে তাড়াতে হলে বেশ কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। এজন্য শিখার মায়ের কাছ থেকে কবিরাজ অগ্রিম ৭ হাজার টাকা নেয়। এক পর্যায়ে শুরু হয় চিকিৎসার। প্রথমে ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে চলে চিকিৎসা। এতে কিছুটা কাজ হলে বিশ্বাস বাড়ে শিখার মায়ের। সে তখন তাদের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে শুরু করে। এক পর্যায়ে কবিরাজ দম্পতি বলে আপনার মেয়ের ওপর থেকে খারাপ আছর বিদায় করতে হলে তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে হবে। সেখানে নিয়ে গেলে আমরা চিকিৎসাটা ভালোভাবে করতে পারবো।
এরই প্রেক্ষিতে ১৭ জুন (সোমবার) বিকেলে শিখাকে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি চৌধুরিপাড়ায় কবিরাজের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। একদিন ভালো থাকার পর ১৮জুন (মঙ্গলবার) আবার শুরু হয় শিখার অস্বাভাবিকতা। এসময় কবিরাজ ফারুক ও তার স্ত্রী জেসমিন চিকিৎসার নামে শিখার মায়ের সামনেই তার ওপর শুরু করে শারীরিক নির্যাতন। শিখার প্রচন্ড আত্মচিৎকারেও থামেনি তাদের নির্যাতন। মেয়ের চিৎকার দেখে শিখার মা প্রতিবাদ করলে তারা বলে আমরাতো আপনার মেয়েকে মারছি না। মারছি তার সাথে থাকা খারাপ জ্বিনকে। আর চিৎকারতো সে করছে না করছে ওই খারাপ জ্বিন। আপনার সহ্য না হলে পাশের ঘরে গিয়ে বসে থাকেন।
একপর্যায়ের কবিরাজ ফারুক ও তার স্ত্রী জেসমিন শিখার হাত পা বেধে ফেলে। পরে বুকের ওপর উঠে আঘাত করতে থাকে। মুখে কাপড় ঢুকিয়ে গলা চেপ ধরে রাখে। এভাবে চলে দুদিন। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে শিখার মা মেয়েকে কবিরাজের বাড়ি রেখে সাদ্দাম মার্কেটে নিজে বাড়িতে যায় ব্যক্তিগত কাজে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় কবিরাজ ফারুক শিখার মাকে ফোন করে বলে আপনার মেয়েকে খারাপ জ্বিন টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
আপনি তাড়াতাড়ি আসেন। এখবর শুনে শিখার মা কবিরাজের বাড়িতে এসে দেখে তার মেয়েকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে তাড়াতাড়ি শিখার মা তাদের ব্যক্তিগত ডাক্তারকে খবর দিয়ে সে এসে দেখে শিখা মারা গেছে কয়েক ঘন্টা আগে।
এর পরে তারা বিষয়টি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অবহিত করে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ শিখার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং কবিরাজ দম্পতিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বুধবার রাত ১২টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দাড়িয়ে এই প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলো শিখার মা সুরাইয়া বেগম।
সবশেষে তিনি তার ভূল শিকার করে জানায়, আমার মতো আর কোন মা যেনো এই রকম ভূল না করে। আর সেই সাথে আমি তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই। তাদের দৃৃৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হলে আমার মেয়ের আত্মা অন্তত শান্তি পাবে।
এবিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এইচ এম জসিম উদ্দিন জানায়, কবিরাজের ভূল চিকিৎসায় শিখা নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে শিখার লাশ উদ্ধার করেছি। এবং কবিরাজ দম্পতিদের আটক করেছি। শিখার মা এঘটনায় রাতেই বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। যার নং-৩৭।
আপনার মতামত লিখুন........