নজরুল ইসলাম সুজনঃ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ডিং বা আলোচনায় আছে একটি বিষয়। তা হলো, নারী কিসে আটকায়। জনসংস্কৃতি তথা জনমানসের ভেতরে থাকা এই কথা কেন আবার চাউর হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে? এ কথার মধ্য দিয়ে আমাদের মনোস্তত্ত্বের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
মানুষের জন্ম সত্যিই এক বিস্ময়। কি করে মাতৃগর্ভে একটি ভ্রণ দিন মাস পার করে মানব শিশুতে রূপ নেয়, পরিণত হয় তা ভাবনারও অতীত। তা কেবল মাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ তায়ালাই জানেন। তার এক অপার মহিমা। আর এই মহিমা ধারণের গুণ, যোগ্যতা, ক্ষমতা মহান সৃষ্টিকর্তা কেবল নারীকেই দিয়েছেন। মাতৃগর্ভের স্মৃতি আমাদের মনেও থাকে না, সে আরেক জীবন! জন্মের পর আরেক নতুন যাপন।
সম্প্রতি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফির বিচ্ছেদের খবর আসার পর সামাজিকমাধ্যমে স্ট্যাটাস, মিম, ট্রলের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এমনই একটি মিম পোস্টের বক্তব্য ছিল এমন- ‘জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতা, বিল গেটসের টাকা, হাকিমির জনপ্রিয়তা, হুমায়ুন ফরিদীর ভালোবাসা, তাহসানের কণ্ঠ কিংবা হৃত্বিক রোশানের স্মার্টনেস। কোনো কিছুই নারীকে আটকাতে পারেনি। বলতে পারবেন নারী কিসে আটকায়?’ এখানে যেসব পুরুষের নাম নেয়া হয়েছে, তারা সবাই পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তাদের সঙ্গীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। তবু বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে কেবল নারীর আটকানোর আলোচনা কেন? এই ধরনের ট্যাগলাইনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত সামাজিকমাধ্যমে উপচে পড়ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজন সচেতন নারী লিখেছেন, ‘পুরুষের সৌন্দর্য, ক্ষমতা বা অর্থে আটকায় না নারী। নারী আটকায় পুরুষের ভালোবাসা, সম্মান ও প্রায়োরিটিতে।
এসব বক্তব্যের বিপরীতে অনেক নারীই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টা মত দিয়েছেন। সেখানে উঠে এসেছে দেশের আর্থ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, নারীর প্রতি বৈষম্য ও পীড়নের নগ্ন চিত্রের কথা।
নারীর প্রসঙ্গ পাল্টে কথাসাহিত্যিক ফরিদুল ইসলাম নির্জন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এক কথায় প্রকাশ করুন:- পুরুষ কিসে আটকায়? -পুরুষ আটকায় নারীতে!’ তিনিও একভাবে পুরুষকে টেনে নিয়েছেন নারীর দিকে। তিনি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুজনকেই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তার এ পোস্টের কমেন্টে মাহাবুব রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘পুরুষ আটকায় মায়ায়। মায়া জিনিসটা নারীর চাইতে বেশি সন্তানের ক্ষেত্রে গাঢ় হয়। অনেক দম্পতি হাজারো অভিযোগ অশান্তি সহ্য করে সন্তানের জন্য আটকে থাকতে দেখেছি।’
লেখক মাহবুব মোর্শেদ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘তাহলে পুরুষের মন কিসে আটকায়? আমি তো দেখি, পুরুষের মন কোন কিছুতে আটকায় না। অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সৌন্দর্য, জ্ঞান কোনো কিছু পুরুষকেও আটকাতে পারে না। বরং সত্যি কথা বললে, নারীর চেয়ে পুরুষরা বেশি অস্থির। কোন কিছুই পুরুষকে অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিতে পারে না। নারীকেও পারে না। কিন্তু তুলনামূলকভাবে নারীরা স্থির।
ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রশ্নোত্তর পর্বে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। জুমার পরে এক মুসল্লির পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়- ‘ নারীরা নাকি কিছুতেই আটকায় না, ইসলামে নারীদের আটকানোর আদৌ কোনও জায়গা কি আছে?
এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন,একজন মুসলমান হিসেবে নারী ও পুরুষ সবারই আটকানোর একটাই জায়গা আছে। সেটি হলো- আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশ ও নিষেধ। মুসলমান পুরুষ হোক বা নারী, বৃদ্ধ হোক বা যুবক, ধনী হোক বা গরীব—যখন কিছু করতে গিয়ে দেখবে যে, এ বিষয়ে আল্লাহর এই আদেশ আছে বা এই নিষেধ আছে, তখন সে আটকে যাবে। অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ-নিষেধের বিরোধী চিন্তা নিয়ে সে অগ্রসর হতে পারবে না। এটা শুধু আটকে যাওয়া নয়,একইসঙ্গে তার চূড়ান্ত সফলতার পথও।
ইসলামে নারীর শিক্ষাঃ
নারীদের শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সাথে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত : ১৯)।
মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’
নবীজি সা. বলেছেন, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন, ইবনে মাজাহ শরিফ)।
তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মা হিসাবে ইসলাম নারীদের যে মর্যাদা দিয়েছে
হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি সা. বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পৃথিবীর কোনো তন্ত্রমন্ত্র ইসলামের আগে বা ইসলামের মতো নারীকে এতো সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারেনি।
লেখকঃ সংবাদকর্মী
যুগ্ম সম্পাদক, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।
ফতুল্লা প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলাদেশের আলো।
আপনার মতামত লিখুন........