নারায়ণগঞ্জসোমবার , ১০ জুলাই ২০২৩
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

সিনেমা হল গুলি দূর্দিন কাটিয়ে সুদিনে ফিরবে তো?

Alokito Narayanganj24
জুলাই ১০, ২০২৩ ১০:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মো. মনির হোসেন:মানুষ বিনোদন ছাড়া থাকতে পারে না, বেঁচে থাকতে হলে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের মতো বিনোদনও একটি প্রয়োজনীয় বিষয়, আর তাই আমাদের বিনোদনের মাধ্যম ছিল সিনেমা হল, সপ্তাহে কোন সিনেমা হলে কোন ছবি মুক্তি পেত তা দৈনিক ইত্তেফাকের পাতা থেকে অথবা সিনেমার পোষ্টার থেকে জেনে নিতাম।

আমার ছোট বেলা এবং কিশোর বেলা কেটেছে নারায়ণগঞ্জে, আর এই নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকার মধ্যে ছিল ছয়টি সিনেমা হল, হংস, আশা, মাশা, মেট্টো, ডায়মন্ড, গুলশান পরে আর ও দুটি সিনেমা হল হলো বনানী ও সম্রাট নামে। তবে ছোটবেলায় সিনেমা হলগুলো আমার কাছে ছিল এক বিস্ময়! সিনেমা হলগুলো ঘিরে বিরাজ করতো হুল্লোর। নানা কিসিমের মানুষ, দোকানপাট এবং হলের উঁচু ছাদের ভবনে কেমন একটা মাদক লাগা গন্ধ, সিনেমা শুরুর আগে বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি, সব মিলিয়ে এক মহাযজ্ঞ।

আমার প্রথম সিনেমা হলে প্রবেশ মায়ের কোলে চড়ে, ছবির নাম মনে নেই, সিনেমার কী গল্প, কারা নায়ক নায়িকা কিছুই বুঝিনি তখন। শুধু মনে আছে হলে থাকার পুরোটা সময় একবার মায়ের কোলে, একবার বাবার কোলে আরেকবার খালার কোলে ঘুরেছি। তখন গোটা পরিবার নিয়ে হলে সিনেমা দেখার চলন ছিল, সবার উদ্বেগ ছিল আমি যেন না কাঁদি, কারণ কাঁদলেই সবার সিনেমা দেখা মাটি, এরপর স্কুলে পড়ার সময় সহ পাঠিদের সঙ্গে হলে গিয়ে অনেক সিনেমা।

তবে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যার চেয়ে সিনেমা হলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঈদে নতুন সিনেমার বুকিং নিশ্চিত করা নিয়ে হলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা লেগে থাকত সে সময়ে, দর্শক টানতে হলগুলো সাজানো হতো রং-আলোয়, সংস্কার করা হতো নড়বড়ে আসনগুলো, সিনেমা হলের মালিক ও কর্মচারীরা থাকতেন উৎসবের মেজাজে।

আর এখন ও সেই কালজয়ী সিনেমাগুলির কথা মনে পরে, নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনীত অবুঝ মন, বাদী থেকে বেগম, ময়না মতি, রংবাজ, বেঈমান, অনন্ত প্রেম, অবাক পৃথিবী, গুন্ডা, আসামী, আলো তুমি আলেয়া, আপনজন, তারপর ফারুক অভিনীত লাঠিয়াল, গোলাপী এখন ট্রেনে, সারেং বৌ, সখি তুমি কার, কথা দিলাম, বুলবুল আহমেদ অভিনীত দেবদাস, বধু বিদায়, মহা নায়ক, ফেরারী বসন্ত, দি ফাদার, নায়ক আলমগীর অভিনীত দস্যু রানী, মনিহার, সোহেল রানার এপার ওপার, জীবন নৌকা ইত্যাদি সিনেমার কথা।

আশির দশকে যখন আমাদের তরুণ বয়স, তখন জাফর ইকবাল-ববিতা, ফারুক-ববিতা এবং আলমগীর-শাবানা ছিলেন রোমান্টিক সিনেমার সবচেয়ে প্রিয় জুটি, এ ছাড়া ওয়াসিম-অঞ্জু ঘোষ জুটি ফোক ঘরানার সিনেমা জনপ্রিয় করেছিল, আর সোহেল রানা ও জসিম ছিলেন অ্যাকশন সিনেমার অতুলনীয় তারকা।

আর সে সময়ে একটি সিনেমা হলে ৩০ জনেরও বেশি লোক কাজ করত, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ঈদের সময় তাদের সে কী কদর! একটা টিকিট ম্যানেজ করে দাও না, তুমি তো হলের স্টাফ, তুমি না পারলে কে পারবে? এভাবে স্বজনরা তাদের অনুরোধ করতেন সিনেমার কিছু টিকিট ম্যানেজ করে দিতে। আবার হলে দর্শকের সংখ্যা ও বেশি ছিল, তাই প্রায় প্রতিটি শোতে অতিরিক্ত আসনের ব্যবস্থা করতে হতো, অতিরিক্ত আসনও যখন পূর্ণ হয়ে যেত, তখন কিছু লোক দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখার জন্য অনুরোধ করত, টানা আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তারা সিনেমা দেখত, ভাবা যায়!

আমার শৈশব কৈশোরের স্মৃতি ঘেরা সেই সিনেমা হলগুলি বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বছর আগে। তবে এখনো আমি সিনেমা হলগুলো যেখানে ছিলো সেখানে গেলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি সেই দিকে। এই জায়গা গুলি অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে…

তবে স্কুল পালিয়ে কত সিনেমা দেখেছি তার কোনো হিসেব নেই। এমনও হয়েছে একই দিনে আশা হলে বারোটা থেকে তিনটার শো দেখে পরে গুলশানে তিনটা থেকে ছয়টার শো দেখে পরে বাড়ি ফিরেছি। এছাড়া পঞ্চবটিতে ছিল বনানী সিনেমা হল সেখানেও দেখেছি অসংখ্য সিনেমা।

দেশের অনেক সিনেমা হলের ঠিক এই রকমই অবস্থা, কোথাও কোথাও হয়তো বন্ধ হয়ে যাওয়া হলের ভবনটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে, তবে বেশিরভাগ জায়গায়ই হল ভেঙে ফেলা হয়েছে, বহুতল ভবন হয়েছে, মার্কেট হয়েছে, অবধারিত প্রশ্ন কেন এমনটা হলো? হল মালিকরা বলেন ভালো সিনেমা নেই, তাই হল চালিয়ে বছরের পর লোকসান গুনতে হয়, প্রযোজকরা বলেন, ভালো গল্প নেই, ভালো পরিচালক নেই, ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী নেই, তাই লগ্নি করা টাকা উঠে আসে না। স্ক্রিপ্ট রাইটাররা বলেন, ভালো গল্প লিখে কী হবে, কারা অভিনয় করবে? পরিচালকরা বলেন, শিল্পী কই? কাদের নিয়ে কাজ করব? সব মিলিয়ে বিশাল গ্যাঁড়াকল। আর এসবের মাঝে পড়ে দর্শক মুখ ফিরিয়েছে সিনেমা হল থেকে তারা বলেন ভালো পরিবেশ নেই, ভালো সিনেমা নেই, স্বপরিবারে সিনেমা হলে যাওয়া যায় না ইত্যাদি।

তবে কিছুদিন আগে চলচ্চিত্র পরিচালক ও বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া সোসাইটির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব দাবী করেছিলেন, ৩০০ নির্বাচনী আসনে ৩০০ সিনেপ্লেক্স চাই আমরা, এ দাবির পক্ষে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। সারা দুনিয়ায় এখন সিনেপ্লেক্স কালচার শুরু হয়েছে। সেগুলোতে ডিজিটাল সব সুযোগ-সুবিধা থাকায় দর্শকরা মজা পাচ্ছে, ভালো ব্যবসাও হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বত্র সিনেপ্লেক্স গড়ে উঠলে চলচ্চিত্রের ব্যবসা আবারও চাঙ্গা হবে বলে জানান তিনি।

এসবের মধ্যে ভারত থেকে সিনেমা আমদানি শুরু হয়েছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো সংগঠন একমত হয়ে ভারতীয় সিনেমা আমদানির শুরু করেছেন। কিন্তু সেখানেও বাঁধ সেধেছেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই। কোনো লাভ হয় নাই ভারতীয় ছবি চলে এসেছে, শাহরুখ খান অভিনীত পাঠান ইতিমধ্যেই প্রদর্শিত হয়েছে।

এদিকে তহবিল গঠনের কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি সিনেমা হল টাকা নিয়েছে ঋণ হিসেবে, বাকি টাকা পড়ে আছে অলস, হল মালিকদের কথা হলো, ঋণ নিয়ে পরে শোধ করব কীভাবে? হল চালিয়ে লাভের মুখ দেখা যায় না।

নব্বইয়ের দশকেও দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১৪’শর বেশি। প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালে ১২ শ’ ৩৫টির মতো সিনেমা হল ছিল দেশে। দুই যুগের ব্যবধানে হলের সংখ্যা কমতে কমতে এখন ১২০টিতে নেমেছে। করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে এখন চালু আছে ৬০টির মতো হল।

এই অবস্থা উত্তরণের জন্য সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল। পাঁচ শতাংশ সুদে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক হাজার কোটি টাকার পুনরায় অর্থায়ন তহবিল গঠন করে।

তবে আগে আমাদের নায়ক নায়িকারা আলোচনায় আসতেন সিনেমার কারণে, কাজের কারণে, অভিনয়ের গুণে, এখন তারা খবরের শিরোনাম হন বারে ক্লাবে গিয়ে মারামারি করে, মাদক মামলায় আসামি হয়ে, সামাজিক মাধ্যমে নানা উল্টা পাল্টা মন্তব্য করে। প্রযোজকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কখনো আবার শিরোনাম হন, সিনেমা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে বা মসজিদ-মাদ্রাসা করে দেওয়ার নাম করে। ২০২২ সালে চলচ্চিত্রের শিল্পীরা আলোচনায় ছিলেন শুধু শিল্পী সমিতির নির্বাচন দিয়ে।

হ্যাঁ, এসবের মাঝেও আমাদের কিছু ভালো ছবি নির্মিত হয়েছে, সেগুলো দেখার জন্য দর্শক কিন্তু ঠিকই হলে যান, টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি থাকে, কিন্তু সেটি বছরে কয়টি? বছরে হাতেগোনা দুয়েকটি সিনেমা দিয়ে কি আর পুরো ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে? চলতে যে পারে না তার জ্বলন্ত প্রমাণ তো একের পর এক হল বন্ধ হয়ে যাওয়া।

এখন হচ্ছে পুরো দুনিয়ার এক সঙ্গে জুড়ে থাকার যুগ। চাইলেই ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোনো দেশের সিনেমা দেখা যায়। টিভির রিমোট ঘোরালেই দেখা যায় একশ চ্যানেল। ফলে প্রতিযোগিতা এখন সারা বিশ্বের সঙ্গে। এই বিষয়টা আমরা বুঝিনি। বা বুঝলেও গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এখনো আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে আমরা পারব সফল হতে। আবারও দর্শকে গমগম করবে হলগুলো। সিনেমাপ্রেমী মানুষের পদভারে মুখর হবে হল প্রাঙ্গণ।

আর চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, এখন দর্শকদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। তারা আর পুরনো দিনের সিনেমা হলগুলোতে গিয়ে সিনেমা দেখতে আগ্রহী নন। তারা চান সিনেমা হলে আরামদায়ক পরিবেশ, উন্নত সাউন্ড সিস্টেম এবং স্ক্রিন, যা তাদের চোখ ও কানকে আরাম দেবে।

তবে মানুষ বিনোদনের জন্য তার কাছে থাকা সবচেয়ে ভালো মাধ্যমই বেছে নেবে এটিই স্বাভাবিক। সুতরাং আমরা যদি আমাদের সিনেমা যুগোপযোগী করতে পারি, হলগুলো আধুনিক করতে পারি মানুষ আবার হলে ভিড় জমাবেন আগের মতোই, আমি বড় আশাবাদী মানুষ, সুতরাং আবারও আমাদের সিনেমার সুদিন ফিরবে এই আশায় আছি।

লেখকঃ কলামিস্ট, সাংবাদিক

সাধারণ সম্পাদক ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!