আলোকিত নারায়নগঞ্জ ২৪ ডট নেট : এক ঠান্ডা মাথার খুনি সোনারগাঁয়ের পলিথিন জাকির। শুধু নিজ স্বার্থ ও আধিপত্য রক্ষায় খুন করেছেন একাধিক। যখন যে পথের কাটা হয়ে দাড়িয়েছে, তাকেই রাস্তা থেকে সড়িয়ে দিয়েছে পলিথিন জাকির। শুধুমাত্র নদীতে চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। চাঁদাবাজিই তার পেশা। সোনারগাঁ ও মেঘনা উপজেলার নৌ-পথের চাঁদাবাজির একচ্ছত্র অধিপতি পলিথিন জাকির।
কে এই জাকির : সোনারগাঁ উপজেলার কান্দারগাঁও গ্রামের মোনতাজ উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন ওরফে পলিথিন জাকির। তার শ্বশুর সোনারগাঁ থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সোহেল রানা।
অশিক্ষিত জাকির হোসেন প্রথমে মাছ বাজারে পলিথিন ব্যাগ বিক্রী করে জীবিকা নির্বাহ করত বলে এখনও এলাকার সবাই তাকে ‘পলিথিন জাকির’ নামেই চেনে। পরে মেঘনা ঘাটে হকারি করেছে কিছুদিন।
যেভাবে উত্থান:
ছোটবেলা থেকেই নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলো পলিথিন জাকির। এলাকায় বালু ভরাট ও জমি বিক্রির দালালিও চালিয়ে যান সমান তালে। ঢাকার একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ওই এলাকায় ‘সোনারগাঁ রিজোর্স সিটি’ নামে বিশাল আবাসন প্রকল্প হাতে নিলে সেখানে বালু ভরাটের দায়িত্ব পায় জাকির। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আইনি জটিলতায় এক সময় বন্ধ হয়ে যায় ওই প্রজেক্টের কাজ। থেমে থাকেনি জাকিরের বালু ভরাট ও জমির দালালি ব্যবসা। কাঁচা টাকার এ ব্যবসা প্রসারিত হয় রাজধানী ঢাকায়। মহাখালীতে ‘জাকির রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানি লিমিটেড’ নামে অফিসও নেন তিনি।
চতুর জাকির ব্যবসার সুবিধার জন্য স্থানীয় এমপির সঙ্গে গড়ে তোলেন সুসম্পর্ক। তার সুবাদে ‘মেসার্স পিয়াল এন্টারপ্রাইজ’ নামে বৈদ্যেরবাজার থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত ইজারা নেন জাকির। অতিরিক্ত চাঁদাবাজির কারণে তার ইজারা বাতিল করা হলে ‘কান্দারগাঁও যুব কল্যাণ সমিতির নামে আবারও ইজারা নেন জাকির। একই অভিযোগে তা বাতিল হলে পুনরায় ইজারা পায় কান্দারগাঁও গ্রামের একতা সংঘের সভাপতি আমজাদ হোসেন। কিন্তু ইজারার নিয়ন্ত্রণ থাকে জাকিরের হাতেই। ইজারা বাতিল হলেও জোরপূর্বক নৌ-পথে চাদাবাঁজি করতেই থাকে জাকির। বর্তমান পর্যন্ত নৌ-পথের চাঁদাবাজির একচ্ছত্র অধিপতি জাকির।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নৌযান থেকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে জাকিরের সন্ত্রাসী বাহীনির ২০-২৫ জনের একটি দল। যারা তিন থেকে চারটি নৌকার মাধ্যমে এ কাজ করে থাকে। প্রতিটি নৌকায় ৬-৮ জন করে থাকেন। তাদের রয়েছে গজারির লাঠি থেকে শুরু করে আধুনিক অস্ত্র।
এক ঠান্ডা মাথার খুনি:
ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম রিপনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে জাকির। ২০১২ সালের ৭ জুন কান্দারগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যুবলীগ নেতা রিপনকে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ীর পিছনেই প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে জাকির বাহিনী। পলিথিন জাকিরকে প্রধান আসামী করে করা হয় মামলা। মামলার প্রধান আসামি জাকির গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে এলাকা ছাড়া হন। এ সময় তার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সেকেন্ড ইন কমান্ড সাধনের কাছে। জাকিরের অনুপস্থিতিতে সাধন নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয় এলাকার আধিপত্য। এ নিয়ে শুরু হয় গুরু-শিষ্যের দ্বন্দ্ব।
২০১৪ সালের ১৫ জুন রাতে সাধনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় পলিথিন জাকিরের নির্দেশে। সাধন ছিল যুবলীগ নেতা রিপন হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি। ফলে সাধন হত্যা মামলায় আসামি করা হয় নিহত যুবলীগ নেতা রিপনের পরিবারের সদস্য ও যারা জাকিরকে গ্রামে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল তাদের। চালানো হয় নিরীহ আসামিদের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পলিথিন জাকিরের নির্দেশে খুন হয় সাধন। ২০১৫ সালে গোলজার নদীতে ফেলে হত্যা করা হয় গোলজারকে। এ হত্যাকান্ডে পলিথিন জাকিরের ভাগিনা মোহাম্মদ আলী সরাসরি জড়িত থাকলেও আড়ালে থাকে পলিথিন জাকিরের নাম। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারী খুন হয় পলিথিন জাকিরের সকল অপকর্মের সাক্ষী ভাগিনা মোহাম্মদ আলী।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২০১৪ সালে খুন হওয়া সাধন হত্যা মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে। এ মামলার আসামী মোহাম্মদ আলী ও শামীম সরকারকে বাঁচাতে গডফাদার ‘জাকির ওরফে পলিথিন জাকির’ সাধনের পরিবারের সাথে ৫০লাখ টাকার বিনিময়ে মিমাংশা করার চুক্তি করেছিলো বলেও জানা গেছে। কিন্তু সাধনের পরিবারকে উক্ত টাকা পরিশোধ না করায় মামা জাকিরের সাথে ভাগিনা মোহাম্মদ আলীর দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামা জাকিরের সাথে ভাগিনা মোহাম্মদ আলীর বাকবিতন্ডা হয়। এসময় মোহাম্মদ আলী মামা জাকিরকে উক্ত টাকা পরিশোধ করে মিমাংশা না করলে তাকেও হত্যা করার হুমকি দেয়। এরপরই কান্দারগাঁও এলাকায় ইউনিক গ্রুপের বালুর মাঠের নির্জন স্থানে খুন হয় মোহাম্মদ আলী। একে একে চারটি খুনের পিছনেই রয়েছে ঠান্ডা মাথার খুনি পলিথিন জাকিরের নাম।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাকির হোসেন ওরফে পলিথিন জাকিরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আপনার মতামত লিখুন........