মো. মনির হোসেনঃস্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকর একটি কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল।
অন্যদিকে গত রোববার রাতে সাভারের পৌর এলাকায় মিজান নামের এক বখাটের জিঘাংসার বলি হলো নীলা নামের কিশোরী। এ যেন রূপকথার সেই রাক্ষসেরই নির্বিচারে প্রাণসংহারের ঘটনা।
ভাই অলকের সঙ্গে রিকশায় করে হাসপাতালে যাচ্ছিল। মেয়েটির তখন প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট। দমটা স্বাভাবিকভাবে নিতে না পারলে যে কী অবর্ণনীয় যন্ত্রণা, এই করোনাকালে তা দেখা যাচ্ছে দেদার। অসুস্থতার মধ্যেই রিকশা থেকে মেয়েটিকে অস্ত্রের মুখে টেনেহিঁচড়ে নামাল মিজান। খানিক দূরে নিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে বুঝিয়ে দিল প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে কী হয়। নির্বিঘ্নে হত্যাকান্ড সেরে সদর্পে পালিয়ে গেল সে।
কি শুরু হল দেশটিতে, আর প্রশাসনের একার পক্ষে কি করা সম্ভব? এদেশের জনগন কি একেবারে নিরব হয়ে গেল, তাদের কোন কর্ত্যব্যবোধ নাই?
একটি ঘটনা মনে পরে গেল, রোমানিয়ায় এক কিশোরীকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যায়। বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, আলেকজান্দ্রা মাসেসানুকে (১৫) গত ১৪ জুলাই অপহরণের পর হত্যা করা হয়। দেশটির জরুরি সেবায় তিনবার ফোন করেও সাহায্য পায়নি মাসেসানু। ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশপ্রধান তো পদত্যাগ করলেনই, শিক্ষামন্ত্রীকেও বরখাস্ত করা হয়।
যে কোনো দেশে আইনি ব্যবস্থা দুর্বল হলে সেখানে জনসচেতনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে, রোমানিয়ার ঘটনাটি এর উজ্জ্বল উদাহরণ। বাংলাদেশ সেখান থেকে অনেক দূরে।
দেশে গত এক সপ্তাহে সংঘটিত বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ও ঘটনার ধরন জনমনে ব্যাপক শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। ধর্ষকের নিপীড়নের হাত থেকে বাদ যায়নি প্রতিবন্ধী কিশোরী, এমনকি ছয় বছরের শিশুও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ভিকটিমকে ছিনিয়ে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় শঙ্কা জানিয়ে মানবাধিকারকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং বিচার প্রক্রিয়া নারীবান্ধব করতে না পারার কারণেই ধর্ষকরা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য ভাবছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক হিসাবে দেখা গেছে, কেবল গত আগস্ট মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৪৯ জন নারী ও শিশু। এরমধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩২ জন।
এদিকে আইনজীবী মেসবাহ উদ্দিন গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে এনে নিজেই হাইকোর্টে এই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
পরে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনার দায় নিরূপণে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সাধারণ) কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাঁদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার মারফত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এভাবে কি ধর্ষন বন্ধ করা যাবে? এগুলি তো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরের কাহিনী, ধর্ষককে গ্রেফতার করা, হাই কোর্টে রুল ইত্যাদি।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ কিশোর যুবকরা পড়ে থাকে ফেসবুকে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এর যাত্রা শুরু। গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলে। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফেসবুক নিঃসন্দেহে সামাজিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। একই সঙ্গে এর নেতিবাচক প্রভাবও কম নয়। বখাটেরা সংখ্যায় যতই হোক, একটা মহল্লা বা পাড়ার জোটবদ্ধ তরুণ-যুবার চেয়ে তো বড় কিছু নয়। এমন নয় যে বখাটেদের বিরুদ্ধে হাতাহাতি করতে হবে, লাঠি নিয়ে লড়তে হবে। শুধু করতে হবে সবাই মিলে প্রতিবাদ, ইভটিচিং, ধর্ষনের মত ঘটনা ঘটতে দেখলেই করতে হবে সবাই মিলে প্রতিবাদ, তাহলেই সব সম্বব হবে। নইলে দেশ, এই সমাজে একের পর এক এ সমস্ত ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও
সিনিয়র সহ-সভাপতি
ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব
আপনার মতামত লিখুন........