মো. মনির হোসেন: করোনা পরিস্থিতিতে টালমাটাল গোটা বিশ্ব, যার ছায়া পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে চালসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। চালের পাশাপাশি ডাল, আটা, চিনি, তরকারি, মাছ, মাংসের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দরিদ্র, খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম বেকায়দায় নিম্নবিত্তের মানুষ।
মধ্যবয়সী সুলতানার সংসারে সব মিলিয়ে ১৮ হাজার টাকা আসে প্রতি মাসে। এ টাকায় ৩ সন্তানের দেখাশোনাসহ খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি পয়সাই হিসেব করে খরচ করতে হয় তাকে। ফতুল্লা বাজারে বাজার করতে এসে সুলতানা বলেন, ‘ সব সময় যা কিনি এখন তার অর্ধেক কিনছি অন্য কোনো বিকল্প নেই আমার।’ খাবারের দাম বাড়ার পর থেকে তার পরিবার খাওয়া অর্ধেক করে দিয়েছে। মাছ, মাংস খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। সুলতানা মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ খাবারের বাড়তি দামের সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছেন আমিষ গ্রহণ কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
এবার বছর জুড়েই খাবারের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১ মাস আগের তুলনায় ৮ বেসিস পয়েন্ট (ভিত্তিমূল্য) বেড়ে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়ায়।
শহরের ডিগু বাবুর বাজার, কালির বাজার, ফতুল্লা বাজারের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০ টাকা।
প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ডিগু বাবুর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুমন জানান, মাছের দামও কেজিতে গড়ে ২০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ১ সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। রান্নার এই অপরিহার্য উপাদানটি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।
কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান বলেন, ‘সরবরাহ স্বল্পতার কারণে সবজির দাম সাধারণত প্রতি অক্টোবরেই বেশি থাকে।’
তেল, চিনি, ময়দাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশের বাজারে অনেক বেশি বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়ার অজুহাত দিয়ে দাম বাড়ায়।’
সূত্রমতে, শুধু দরিদ্র মানুষ নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও নানারকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বস্তুত কিছু অসাধু ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব ব্যবসায়ী বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন........