নারায়ণগঞ্জসোমবার , ১৫ অক্টোবর ২০১৮
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

সন্তানের ১০দিনের রিমান্ড : পিতার বুকফাটা আর্তনাদ!

alokitonarayanganj
অক্টোবর ১৫, ২০১৮ ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আলোকিত নারায়ণগঞ্জ ২৪ ডট নেট : নারায়ণগঞ্জের একজন প্রসিদ্ধ ঠিকাদার ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া। যাকে সবাই মোস্তফা কন্ট্রাক্টর হিসেবেই চিনেন। এখন তার নিয়মিত কাজ হয়ে দাড়িয়েছে ভোরে বিছানা থেকে ওঠেই সন্তানকে দেখতে যাওয়ার প্রস্তুতি। সেখান থেকে আদালত। সন্তানকে দেখার জন্য সপ্তাহে দেখাও মিলছেনা কখনও কখনও। আদালত থেকে আইনজীবীদের পিছনে পিছনে দৌড়ানো। তার অবস্থান কখনও কারাগার কখনওবা আদালতপাড়া। কখনও আদালতের গারদখানায় কখনও বিচারের কাঠগড়ার সামনে। কোথাও স্থীর করে বসতেও পারছেন না এই পিতা। এ এক বিষন্ন জীবনে পড়েছেন মোস্তফা মিয়া। কারন তার আদরের সন্তান ২৭ দিন যাবত কারাগারে। যার ১০দিনই ছিলেন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের রিমান্ডে।

এই মোস্তফা মিয়ার সন্তান হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি। তার বিরুদ্ধে তিনটি অস্ত্র মামলা দিয়ে আগেই ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন মশিউর রহমান রনি। ওই সময় রনির বাবা মোস্তফা মিয়া ও তার মা ছিলেন সৌদি আরবে হজ্ব পালনে। সেখান থেকে তারা জানতে পারেন তাদের আদরের সন্তান রনি নিখোঁজ। পুলিশের কোন সংস্থাও রনিকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। এমন পরিস্থিতিতে ১৬ সেপ্টেম্বর রনির খালা সহ তার আত্মীয়স্বজন রনিকে উদ্ধার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। এ পরিস্থিতিতে সন্তান নিখোঁজের খবর পেয়ে হজ্বব্রত ছিলেন বাবা মা।

১৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার দাপাইদ্রাকপুর এলাকা মশিউর রহমান রনিকে অস্ত্র ও গুলিসহ উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে পুলিশ। এমন খবরেও রনির আত্মীয়স্বজনের গলা থেকে যেনো ফাঁস লাগানো রশিটা নেমে গেল। নিখোঁজের চেয়েও যেনো রনির বিরুদ্ধে অস্ত্র গুলি মামলায় তারা সন্তুষ্ট ছিলেন।
এদিকে দেশে ফিরে আসলেন রনির বাবা ও মা। রনির বাবা এখণ নিয়মিত আদালত ও কারাগার যাতায়াতই তার কাজ। রনিকে কোর্টে আনা না হলেও আদালতপাড়ায় নিয়মিতই আসছেন মোস্তফা মিয়া। কথা বলছেন রনির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে। আইনজীবীর কাছে প্রতিদিন এসেই জানতে চাচ্ছেন নতুন কোন মামলায় আবার আসামি করা হলো কিনা। সার্বক্ষনিক এক ভয় ভীতির মধ্যে রনির বাবা ও তার পরিবার।

ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বিগত সময়ে মশিউর রহমান রনির রাজনৈতিক অনেক কর্মকান্ডের চারপাশেই দেখা যেতো মোস্তফা মিয়াকে। রনির মিছিল শেষে তার মুখের ঘাম মুছে দিত পিতা মোস্তফা মিয়া। রনির মিছিলের সময় আশপাশে পানির বোতল নিয়ে দাড়িয়ে থাকতেন তিনি। সন্তান মিছিল করে তার গলাটা শুকিয়ে যেতে পারে এমনটা ভেবে পানির বোতল নিয়ে সন্তানের হাতে পানির বোতল তুলে দিয়ে বলতেন, নেও বাবা পানিটা খেয়ে নাও।’ মুখটা ঘেমে গেলেও রুমাল দিয়ে মুছে দিতেন পিতা।

অথচ সেই সন্তান গ্রেপ্তারের ২৭ দিন পার হয়ে গেল। রিমান্ডে ছিল ১০টি দিন। এমন পিতার বুকফাটা আর্তনাদ কারো বুঝবার নয়। আর বিদেশে থেকে যখন পিতা শুনতে পান তার সন্তান নিখোঁজ এবং পুলিশ গ্রেপ্তারের কথাও স্বীকার করছেনা। সেই অনুভুতিটা একমাত্র মোস্তফা মিয়া ছাড়া আর কারো বুঝবার নয়। সেই সন্তান যখন কারাগারে পরে আছে সেই পিতার কি করে বিছানায় ঘুম হবে? তাই মোস্তফা মিয়া প্রতিদিন সকাল হলেই বেরিয়ে পড়েন। আদালত কিংবা কারাগারের গেটের সামনে। তবুও যেনো সন্তানের কাছাকাছি থাকতে পারেন।

এদিকে ১৪ অক্টোবর ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা একটি নাশকতার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ১৪ অক্টোবর রবিবার দুপুরে ফতুল্লা থানা থেকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে রনিকে কারাগারে পাঠান আদালত। জানিয়েছেন রনির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এদিন সকাল থেকেই ফতুল্লায় দৌড়ে যান মোস্তফা মিয়া। সেখান থেকে রনিকে পাঠানোর আগেই হাজির হন তিনি আদালতে। খুজতে শুরু করেন আইনজীবীকে। দুপুরের দিকে আনা হলো রনিকে। তারপর কারাগারে নেওয়ার পথে পিতার অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে বাবাকে শান্তনা দিতেই যেনো হাসলেন রনি। কিন্তু সন্তানের হাাসির ভিতরে শুকিয়ে থাকা কষ্টটা যেনো মোস্তফা মিয়া বুঝে গেলেই তার চোখে জল এসে পড়লো। হাত উচিয়ে দুজনই বাবা ও ছেলে বিদায় নিল। সন্তানকে প্রিজন ভ্যানে করে নেয়া হলো কারাগারে। মোস্তফা মিয়া প্রিজন ভ্যানের দিকে তাকিয়ে সেখানেই চুপসে দাড়িয়ে রইলেন বেশকতক্ষণ।

জানাগেছে, এর আগে মশিউর রহমান রনিকে পৃথক তিনটি মামলায় ৭দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের দাবি অনুযায়ী গত ১৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে গ্রেপ্তারের ২৭ দিনে এ পর্যন্ত রিমান্ডে নেয়া হয়েছে মোট ১০দিন। তবে রনির পরিবারের দাবি রনিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বরই পুলিশ তাকে ঢাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেই দাবি অনুযায়ী পুলিশের হেফাজতে রনির কেটে গেল ১০দিন। আর এদিকে ২৭ দিন। তার বিরুদ্ধে তিনটি অস্ত্র মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড ও পরবর্তীতে আরেকটি নাশকতার মামলায় তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয় পুুলিশ।

এদিকে গত ৮ অক্টোবর ফতুল্লা থানার আরও দুটি নাশকতার মামলায় রনিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওইদিন ৮ অক্টোবর দুপুরে আসামি পক্ষের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই দুই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখান নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। আগের দিন ৭ অক্টোবর রবিবার রনিকে আবারো তিন দিনের রিমান্ডে নেয় মডেল থানা পুলিশ। সোমবার ৮ অক্টোবর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর ও ৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ আদালতে রনিকে ডান্ডাবেড়ী পড়িয়ে হাজির করে পুলিশ।

৭ অক্টোবর রবিবার সকালে ফতুল্লা মডেল থানার একটি নাশকতার মামলায় নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রনিকে হাজির করে পুলিশ। রনি ও ফতুল্লার বিএনপি নেতা হুমায়ুন খন্দকারের বিরুদ্ধে ৭দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত রনিকে তিন দিন ও হুমায়ুন খন্দকারকে এক দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। ওইদিন আদালতে হাজিরা করা হলে এজলাসে নেয়ার পথে মশিউর রহমান রনি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বলেন, তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়না। সপ্তাহে দুইদিন দেখার সুযোগ থাকলেও কোন দুইদিন সেটাও নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। কনডেম সেলে রাখা হয় সাধারণত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসাসিদের। ওইদিন অনেকটা কান্নাজড়িত কন্ঠেই তিনি এসব কথা জানান। এর আগে পৃথক তিনটি মামলায় রনিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।

অন্যদিকে জানাগেছে, তিনটি অস্ত্র মামলায় টানা ৭ দিনের রিমান্ড শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠান আদালত। ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি কার্তুজ উদ্ধারের মামলায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে রনিকে হাজির করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আদালত রনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে দুইটি অস্ত্র মামলায় টানা দ্বিতীয় দফায় ৫দিন রিমান্ড শেষে গত ২২ সেপ্টেম্বর ৫টি কার্তুজ উদ্ধারের মামলায় তৃতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে নেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল মোহসীনের আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আরও জানাগেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর তিন দিনের রিমান্ড শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে আরেকটি অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে আরেকটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। ওই মামলায় আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ।

পুলিশ দাবি করে-রিমান্ডের আসামি মশিউর রহমান রনিকে নিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে ফতুলা দাপা ইদ্রাকপুর ওরিয়ন গ্রুপের মাঠে একটি পাইপ গান উদ্ধার করে। পরে এসআই কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে আরেকটি অস্ত্র মামলা দায়ের করে রনিকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। এ মামলায় দুইদিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল মোহসীনের আদালতে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ একটি বিদেশী অস্ত্র ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে আবেদন করলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন। তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলে জানায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।

রনির পরিবারের দাবি গত ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিখোঁজ হন রনি। তাকে ডিবি পুুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও দাবি করা হয়। এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে ফতুল্লা দাপা ইদ্রাকপুর এলাকা থেকে মশিউর রহমান রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে বিদেশী একটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের এসআই আব্দুল শাফিউল আলম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে তাকে দাপা ইদ্রাকপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রনির পরিবার দাবি করে আসছিল- গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাজধানী বাড্ডা এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে রনির সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রনির স্বজনেরা।

এখানে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মশিউর রহমান রনি তার ফেসবুকে একটি স্টাট্যাজ দেন। ওই স্টাট্যাজটি স্থানীয় মিডিয়াতে প্রকাশিত হলে রনিকে নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়। তারপর তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!