আলোকিত নারায়নগঞ্জ ২৪ ডট নেট : বন্দরে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে তিন নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। সোমবার দুপুরে কমিশনের ৩ সদস্য নারায়ণগঞ্জে এসে নির্যাতনের শিকার এক নারীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সর্ম্পকে বিশদ জেনেছেন। সেই সঙ্গে বন্দর থানার ওসিকে ডেকে এনে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। কমিশনের সদস্যরা নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফাইজুল কবির, উপ পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসেন। ওই সময় তাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা নির্যাতনের শিকার ফাতেমা বেগম ওরফে ফতেহ কে নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতাল থেকে আদালতের কনফারেন্স রুমে এনে ঘটনা সর্ম্পকে তার বক্তব্য শোনেন। পরে বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে ডেকে এনে মামলার নির্দেশ দেন এবং কি কি ধারায় মামলাটি রুজু হবে সে বিষয়েও দিক নির্দেশনা দেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে ঘটনার তিনদিন পর গতকাল সন্ধ্যায় ফাতেমা বেগম বাদি করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করানো হয়।
পরে কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফাইজুল কবির গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে মানুষের অধিকার যেভাবে সংরক্ষিত হবে আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই। এ ঘটনায় থানা পুলিশ যাতে মামলাটিকে কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে তাই আমরা এক্ষেত্রে যেসব ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং কোন কোন সেকশনে মামলাটি রুজু হতে পারে সে বিষয়ে থানার ওসিকে নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা চাই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যাতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। আমরা নির্যাতিত নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং থানার ওসিকে নির্দেশনা দেব। সেই সঙ্গে আহতদের সুচিকিৎসা যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্য হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি।
বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা বেগম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। দেরীতে মামলা রুজু সর্ম্পকে তিনি বলেন, আমরা আগে চেয়েছিলাম নির্যাতনের শিকার নারীরা একটু সুস্থ হয়ে মামলা করলে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে। এ নিয়ে আমাদের কোন অবহেলা ছিল না। কারণ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশই তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে বন্দর উপজেলার দক্ষিণ কলাবাগ এলাকায় ‘পতিতা’ অপবাদ দিয়ে তিন নারীকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এ সময় তিন নারীর চুল কেটে দেয়া হয়। পরে কয়েক ঘণ্টা তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পরে তাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। খবর পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ নির্যাতিত তিন নারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরপর তাদের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন........