বিশেষ প্রতিনিধিঃঅপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দেশের নিট সেক্টরের প্রধান কেন্দ্র ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ঝুট সন্ত্রাসীরা। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বিসিকের তিন শতাধিক গার্মেন্টস দাবড়ে বেড়ানো এসব সন্ত্রাসীর হাতে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছেন শিল্প মালিকরা। সেখানে অন্তত ১৫টি গ্রুপের কয়েকশ’ সন্ত্রাসী এখন সক্রিয়। যখন যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসে এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ তখন সেই সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় গিয়েই ঝুট ব্যবসায় তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। তাদের রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র। গত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত সন্ত্রাসীদের বিশাল অস্ত্র ভান্ডারের সিংহভাগই দখলে রেখেছে এসব ঝুট সন্ত্রাসী।
জানা যায়, ঝুট সন্ত্রাসীদের ভাগের টাকা রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, বিশেষ পেশার লোকজন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে তথাকথিত শ্রমিক নেতাদের ঝুঁলিতেও নিয়মিত চলে যায়। খোদ নিট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র এক শীর্ষ নেতা এসব ঝুট সন্ত্রাসীর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এই নেতার সঙ্গে জামায়াতের গোপন সখ্যতাও আছে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যতা ও তাদের সমর্থন থাকায় ঝুট সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কখনই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। দিনে দিনে তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। বিসিকে বর্তমান একজন মুকুটহীন সম্রাট রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র, বিশাল ইয়াবা ব্যবসা আর বিসিকের ৫০ ভাগ ঝুট ব্যবসা এখন তার দখলে। পুলিশ, র্যাব সব কিছু জানলেও রহস্যজনক কারণে সে রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর উপর হামলার ঘটনায় ঐ মুকুটহীন সম্রাটসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বিশাল অত্যাধুনিক অস্ত্র ভান্ডার এখনো অক্ষত রয়েছে। গত কয়েক বছরে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে জেলার আলোচিত দুই ডজন শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত হলেও তাদের অবৈধ অস্ত্র ভান্ডার উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্রের মধ্যে একে-৪৭ রাইফেল, বন্দুক, নাইন এম এম পিস্তলসহ অত্যাধুনিক অনেক অস্ত্র রয়েছে বলে জানা যায়। পুলিশ প্রশাসনের ভাষ্য, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালালেও বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ক্রসফায়ারে নিহত সন্ত্রাসীদের অস্ত্রগুলো কোথায়?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অবৈধ অস্ত্রের বেশিরভাগই চলে গেছে নারায়ণগঞ্জের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণকারী ছোট-বড় প্রায় ১৫ সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর বেশিরভাগই এখন শাসন করছে ফতুল্লা এবং মাসদাইর এলাকার বিশাল শিল্প পল্লী। প্রতি মাসে বিসিক এবং মাসদাইর এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশত গার্মেন্টসের কোটি কোটি টাকার ঝুট বেচাকেনা করছে এ সন্ত্রাসীরা। আগেই উল্লেখিত বিসিকের সেই মুকুটহীন সম্রাট একাই প্রায় ৩০টি বড় গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। এ ছাড়াও বিসিক ও আশপাশের এলাকায় দাবড়ে বেড়াচ্ছে কয়েকশ’ সন্ত্রাসী।
আপনার মতামত লিখুন........