নারায়ণগঞ্জবুধবার , ৩০ জানুয়ারি ২০১৯
  1. অর্থনীতি
  2. আরো
  3. এক্সক্লুসিভ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. নারায়ণগঞ্জ
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. লিড নিউজ
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সারাদেশ

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নারায়ণগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা

Alokito Narayanganj24
জানুয়ারি ৩০, ২০১৯ ৭:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রণজিৎ মোদক : সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জেও ভয়াবহ বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। আর এ দূষণের ভয়াবহতা বাড়িয়ে তুলছে ইটভাটা প্রকল্প। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই তৈরী হচ্ছে এ ইটভাটাগুলো। ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনের ৮ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে আবাসিক বা বাণিজ্যিক অথবা সিটি কর্পোরেশন কিংবা কৃৃষিভূমি, জলাভূমি এসব এলাকা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ইটভাটা তৈরী করতে হবে এবং বনাঞ্চল থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নদীর পার ধরে কিংবা লোকালয়ের পাশেই ইটভাটাগুলো তৈরী করা হচ্ছে। এ আইনের ৭ ধারায় কয়লার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোনো নিয়মনীতি না মেনেই কয়লার ব্যবহার করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইটভাটা মালিকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আইন শুধু আমাদের আইনই দেখায়। যে স্থানে ইটভাটা করলে আমরা আইন অনুযায়ী কাগজ পাবো, সেখানে ইটভাটা করা সম্ভব নয়। ‘

লোকালয়ের পাশেই এসব ইটভাটা স্থাপনের ফলে এলাকাবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বক্তাবলীর স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ইটভাটার ফলে আমাদের পরিবেশের সমস্যা হচ্ছে। যদি এ সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের বিরাট ক্ষতি হবে।

বক্তাবলী, নবীনগর, এনায়েতনগর ও ধর্মগঞ্জ এলাকায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে। বেশিরভাগ ইটভাটাগুলোতে নেই সরকারি অনুমোদন। প্রশাসনের নজর না থাকায় হরদম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার ব্যবসায়ীরা। আইনে নদী বা জলাভূমির পাশ্ববর্তী থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ইটভাটার করার কথা থাকলেও, সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বক্তাবলী ও পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোতে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এই সকল ভাটা এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা আইনের ভয় দেখিয়ে ফায়দা লুটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে আইনের সুষ্ঠু ব্যবহার নেই বলেই এমন অনৈতিক ভাবে তৈরী হচ্ছে ইটভাটাগুলো। ‘বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে একটি নতুন ‘ইটভাটা সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন করে এবং সেখানে বলা হয়েছে এটি যান্ত্রিক উপায়ে করতে হবে এবং সরাসরি গাছ না কেটে কয়লা ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে যে ইটটি তৈরী হবে তা গুণগত মানে যেমন ভালো থাকবে পাশাপাশি আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারবো।’

কিন্তু সরকারের এই আইনের পুরো উল্টো দৃশ্য দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের ইটভাটাগুলোতে। সরকারের উদ্দেশ্য সবুজ বিপ্লব ঘটানো। যেখানে সরকার গাছ না কেটে কয়লা ব্যবহার করতে বলেছে কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কয়লা ব্যবহার না করে গাছ ও টায়ার পুড়ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

অপরদিকে ইটভাটাগুলোতে চলছে শিশুশ্রম। নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার ইটভাটায় কাজ করছে আট বছর বয়সী পলাশ। প্রতিদিন এক হাজার ইট বহনের কাজ করে সে মজুরি পায় মাত্র ১০০ টাকা। শুধু পলাশ নয়, পেটের দায়ে প্রতিদিন তার মতো অন্তত কয়েকশ শিশু ফতুল্লা, বন্দর, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করছে। অথচ আইন অনুযায়ী ১২ বছরের কম বয়সের শিশুদের এ রকম কাজে নেওয়া নিষিদ্ধ।

স্থানীয় সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটের ভাটা। সেসব ভাটায় কাজ করছে ১২ বছর বয়সের নিচের কয়েকশ মেয়ে ও ছেলে শিশু। কয়েকজন ভাটা মালিকের দাবি, বাবা-মায়ের সঙ্গেই এসব শিশু ভাটায় কাজ করতে আসে। তবে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মজুরি নিয়েই সেখানে কাজ করছে।

বন্দর এলাকার একটি ইটভাটায় কাজ করে ৬ বছর বয়সের শিশু মিরাজ। পেটের দায়ে বরিশাল থেকে মায়ের সঙ্গে এসেছে সে ইটের ভাটায় কাজ করতে। মিরাজ জানাল, এই ভাটার মালিক তার মাকে ৩০ হাজার টাকা দাদন দিয়েছেন। দাদনের টাকা শোধ করতেই সে মায়ের সঙ্গে কাজ করতে চলে এসেছে। তার একটাই কথা- ‘কাম না করলে খামু কি?’ মিরাজ আরও জানাল, মাথায় করে শুকনো ইট খোলায় তুলে সে। পোড়া শেষ হলে ইট সাজিয়ে রাখে। কাজ বড় কষ্টের। অনেক সময়ে ইট মাথা থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পায়। কিন্তু শ্রমিক সরদার এগুলো দেখে না।

একই রকম কষ্টের কথা জানায় ফতুল্লার এলাকার ইটভাটার এগার বছরের শ্রমিক শান্ত। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। সেও মায়ের সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করতে এসেছে। এমন দৃশ্য নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ ইটভাটার। ইট তৈরি ও টানার কাজ করছে শিশুরা। কোনো কোনো শিশু ২০ কেজি ওজনের সমান ছয়টা কাঁচা ইট মাথায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ইটভাটাগুলোয় কর্মরত শিশুদের বেশিরভাগই এসেছে কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিলেট, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর থেকে। তাদের অভিভাবকদের অনেককে ভাটা-মালিকরা দাদন দিয়েছেন। এই টাকা পরিশোধ করতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের শিশু সন্তানরাও কাজ করছে। কাজ শেষে এসব শিশু ভাটাতেই ঘুমায়, কেউ কেউ আবার বাবা-মায়ের সাথে বাড়িতে চলে যায়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় তাদের কাজ। মাঝে কিছু সময় বিরতির পর টানা কাজ করে বিকাল চারটা পর্যন্ত। এব্যাপারে পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী মহল।

লেখক: রণজিৎ মোদক
শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মতামত লিখুন........

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: দুঃখিত রাইট ক্লিক গ্রহনযোগ্য নয় !!!